দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে কর্মরত পুরোহিত বলেন, "কয়েকদিন ধরেই চুল্লি অবিরাম জ্বলছে। কয়েক মিনিট অন্তর অ্যাম্বুলেন্সের শব্দও আসছে। জুন মাসের সময় এতটা খারাপ অবস্থা দেখেছি। আর এই এখন"... দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে কোভিডে মৃতদের সৎকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পুরোহিত।
বাইরে তখনও দাঁড়িয়ে পর পর পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স। মৃতদের পরিবারের পাশে মাস্ক পরেই দাঁড়িয়েছিল অবসন্ন শ্মশান কর্মীরা। অপেক্ষা টোকেনের। এরপর একসঙ্গে জ্বলে উঠল ১৫টি চিতা। কান্নার রোলে স্তব্ধ শ্মশান ব্যাকুল। দূরে চলা যাওয়া মানুষটির চিতা থেকে পরিজনদের আরও দূরে নিয়ে গেলেন কর্মীরা। করোনা প্রাদুর্ভাবে ত্রস্ত দিল্লিতে নিয়ম তো মানতেই হবে।
রাজধানীতে এখন এটাই চিত্র। দৈনিক সংক্রমণ তো বাড়ছেই। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। একজন এমসিডি কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "গত দুই সপ্তাহ ধরে এখানে প্রতিদিন ১০০ জনেরও বেশি মরদেহ পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ২০টি কোভিডে মৃতদেহ রয়েছে।" একজন কর্মী জানান যে ১৮ নভেম্বর থেকে কোভিডের মৃত্যু ১৩১, এখানে ৩০ জনেরও বেশি করোনায় মৃত রোগীর সৎকার করা হয়। এই শ্মশানে রয়েছে ১১০টি কাঠের চিতা আর চারটি সিএনজি চালিত চুল্লি।
আরও পড়ুন, সামাজিক দূরত্ব-মাস্ক বিধি মেনে মহা কুম্ভের জন্য তৈরি হচ্ছে হরিদ্বার
শ্মশানের আধিকারিকরা জানান কোভিড রোগীদের মরদেহ সকাল দশটার দিকে আসতে শুরু করে। পরবর্তী ২ থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে কার্যত মৃতের স্তুপে পরিণত হয় এই এলাকা। এই বছরের শুরুর দিকে শ্মশানে কোভিডের মৃত্যুর জন্য আলাদা জায়গা ছিল কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যার প্রাবল্য আর বাদ বিচার নেই কোথাও।
নিগমবোধ ঘাটের এক কর্মী রাজেশ বলেন, "পরিবারগুলিকে সাহায্য করি রীতি নীতিগুলো সম্পন্ন করতে। একটা সময় ছিল যখন একাই দিনে ১০ থেকে ১২টি দেহ নিয়ে এসেছি এখানে। ভেবেছিলাম সেই দু:সময় পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু না! ছুটি না নিয়েই কাজ করছি। সকাল থেকে রাত। মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় জানেন। বাড়িতে আমার তিন মেয়ে রয়েছে।"
কাজের মাঝেই কথা বলছেন রাজেশ। এক পরিবারের ইচ্ছে ছিল শেষবারের জন্য প্রিয়জনের মুখটি দেখার। নিথর কিন্তু তবু প্রিয় তো। রাজেশেরও কষ্ট হয়, কিন্তু সরকারি নিয়ম মৃতের মুখ দেখানো যাবে না, কাছেও যাওয়া যাবে না। দিনের শেষে পিপিই কিট ছুড়ে ফেললেন রাজেশ। তিনি এখনও করোনা নেগেটিভ। স্বস্তি সেটাই।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন