উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর জেলার সেউর গ্রামে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে মিডডে মিলে স্রেফ নুন-রুটি খাচ্ছে শিশুরা, ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ভিডিও রেকর্ড করেন জনসন্দেশ টাইমস পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা পবন জয়সওয়াল। এখন জানা যাচ্ছে, ভিডিওটি রেকর্ড হওয়ার এক সপ্তাহ আগেও মিডডে মিলে নুন-ভাত খাওয়ানো হয় বাচ্চাদের।
ইতিমধ্যে রবিবার উত্তর প্রদেশ সরকার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছে জয়সওয়াল এবং তাঁকে যিনি খবর দিয়েছিলেন, সেই সেউর গ্রাম প্রধানের মুখ্য প্রতিনিধি রাজকুমার পালের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেউর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক রাঁধুনি এবং কিছু পড়ুয়ার কাছ থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে, এই প্রথমবার এমনটা ঘটছে না ওই বিদ্যালয়ে।
অন্যদিকে, জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিবাদে জেলা কমিশনারের দফতরে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখান সাংবাদিকরা। এবং স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যাহ্নভোজে খাওয়ানো হয় ডাল-ভাত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে জেলাশাসক অনুরাগ প্যাটেল বলেন, "প্রতিবেদন অন্যভাবে পেশ করতে হয়। আমি আপনাদের একটা ক্লিপ শোনাতে পারি যেখানে এক ব্যক্তি ওঁকে (জয়সওয়াল) ফোন করে বলছেন, 'আমি একটা মতলব করছি, আপনি এসে আমাকে এই ভিডিওটা ভাইরাল করতে সাহায্য করুন'।" অবশ্য প্যাটেল এও যোগ করছেন যে 'ভাইরাল' শব্দটি ওই ক্লিপে কোথাও শোনা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: মিডডে মিলে নুন-রুটি খাচ্ছে বাচ্চারা, ভিডিও তুলে গ্রেফতার সাংবাদিক
"উনি তো প্রিন্টের সাংবাদিক, উনি ছবি তুলতে পারতেন। ওখানে কী হচ্ছে তা নিয়ে লিখতে পারতেন। কিন্তু উনি তা করেন নি, কাজেই ওঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ জাগছে, অতএব ওঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ 'খ' (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা করা হয়েছে।"
এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জয়সওয়াল বলেছেন, ২২ অগাস্ট ভিডিও তোলার জন্য ওই স্কুলে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত বেসিক শিক্ষা অধিকারি (এবিএসএ) ব্রিজেশ সিংকে জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। "২২ অগাস্ট সকাল ১০.৫০ নাগাদ আমি রাজকুমার পালের ফোন পাই। তখন আমি জানতামই না যে উনি গ্রামপ্রধানের প্রতিনিধি। ওই ফোনের পর আমি কথা বলি এবিএসএ-র সঙ্গে, উনি বলেন উনি খোঁজ নেবেন। দুটো ফোনেরই রেকর্ডিং আছে আমার কাছে। তারপর আমি স্কুলে গিয়ে ভিডিও তুলি। প্রথমে আমার কাগজের জন্য রিপোর্ট লিখি, তারপর অন্যান্য রিপোর্টারদের সঙ্গে ভিডিও শেয়ার করি। এখন আমার মুখ বন্ধ করতে চাইছে প্রশাসন।"
আহাউরা থানার স্টেশন অফিসার রাজেশ চৌবে বলছেন মামলার তদন্ত চলাকালীন কোনও তথ্য তিনি দিতে পারবেন না। "এখন পর্যন্ত ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাই নি আমরা, তবে তদন্ত চলছে," বলেন তিনি।
সোমবার উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফে বলা হয় যে স্কুলের এক শিক্ষককে বরখাস্ত করানোর চক্রান্ত করছিলেন রাজকুমার, যে চক্রান্তের "শিকার" হন জয়সওয়াল। অথচ সেউর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এটি "সত্য গোপনের" চেষ্টা মাত্র।
বছর চল্লিশের রুক্মিণী দেবীর মেয়ে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। মিডডে মিলের দুই রাঁধুনিরও একজন রুক্মিণী। তাঁর বক্তব্য, "ওই সাংবাদিক আসার আন্দাজ এক সপ্তাহ আগেও স্কুলে নুন-ভাত পরিবেশন করা হয়। সেদিনই আমি হেডমাস্টার ইন-চার্জ মুরারি লালকে বলি যে কোনও রসদ নেই, ফলে নুন-ভাত দেওয়া হয়েছে। উনি আমাকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন, এবং বলেন যে বাচ্চারা যদি বলে নুন-ভাত খেয়েছে, ওদের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।" মুরারি লাল একথা অস্বীকার করেছেন, যদিও কৈলাস নামে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন যে তাঁর মেয়েও অন্তত দুদিন তাঁকে জানিয়েছে স্কুলে ভাত বা রুটি দিয়ে নুন খাওয়ার কথা।
সারঙ্গা (২৫) নামের আরও এক স্থানীয় বাসিন্দার ছেলেও পড়ে ওই স্কুলে। তিনি বলছেন, "কোথাও কোনও শত্রুতা নেই। চক্রান্তের গল্প সাজানো হচ্ছে স্কুলের হেডমাস্টার এবং অন্যান্য আধিকারিকদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য। প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল তো, সবাই ভেবেছিল কেউ জানতে পারবে না।"