New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/09/arkabha-759.jpg)
স্কুলের গাফিলতিতে বারাসতে পাঁচ বছরের শিশু অর্কাভ সাহার মৃত্য়ুর অভিযোগ ঘিরে শোরগোল বারাসতে।
স্কুল উদ্দীপন অ্যাকাডেমির গাফিলতিতেই বারাসাতে পাঁচ বছরের অর্কাভ সাহার মৃত্য়ু হয়েছে, এই অভিযোগ ঘিরে মুখর গোটা অঞ্চল। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বারাসাত আদালতে পিটিশন দাখিল করছে পরিবার।
স্কুলের গাফিলতিতে বারাসতে পাঁচ বছরের শিশু অর্কাভ সাহার মৃত্য়ুর অভিযোগ ঘিরে শোরগোল বারাসতে।
তারিখটা ৭ সেপ্টেম্বর। রোজ সকাল ১০ টা নাগাদ ইউনিফর্ম পরে মা মিতা সাহার সঙ্গে স্কুলে যেত পাঁচ বছরের অর্কাভ। ঘড়ির কাঁটা দুপুর একটা ছুঁলেই পাঁচ বছরের ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতেন মা। কিন্তু ৭ তারিখে মিতাদেবীর সেই রোজকার রুটিনে ছন্দপতন ঘটল। নিয়মমাফিক সেদিনও দুপুর ১টা নাগাদ অর্কাভকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন মিতাদেবী। "অর্কাভ কোথায়?" বারদুয়েক প্রশ্ন করতেই স্কুলের শিক্ষিকারা শুধু নিজেদের মধ্য়ে চোখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। একজন নাকি প্রশ্ন শুনেই অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন।
"অর্কাভ কোথায়?" প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মিতাদেবী বলেন, "অর্কাভকে দিন।" একথাতেও কোনও সাড়া দেননি শিক্ষিকারা। এমন সময় স্কুলের বাইরে এক রাজমিস্ত্রী জানালেন, স্কুলেরই ইউনিফর্ম পরা একটি শিশু ডোবায় পড়ে গিয়েছিল, তাকে তোলা হয়েছে। তড়িঘড়ি সেখানে গিয়ে মিতাদেবী তাঁর আদরের অর্কাভকে দেখতে পান। এরপর তাকে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গতবছরের কথা। কলকাতার দুই নামী স্কুলে পড়ুয়াদের যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সক্কাল সক্কাল ইউনিফর্ম পরে আপনার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু সে কি স্কুলের চৌহদ্দিতে নিরাপদে থাকছে? এ প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে শহরের অভিভাবকদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের সাক্ষী ছিল শহর কলকাতা। বাস্তবের এ ঘটনার নির্যাসকেই সাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশনে বেঁধে সামাজিক বার্তা দিতে কমেডি স্বাদের ছবি বানিয়েছিলেন টালিগঞ্জ পাড়ার পরিচালকদ্বয় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়। তাঁদের সেই 'হামি' ছবি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সেতুবন্ধন ও পারষ্পরিক বোঝাপড়া অটুট রাখার বার্তা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব বোধহয় কখনও কখনও অন্য় কথা বলে। তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ বারাসতের নবপল্লীর উদ্দীপন অ্যাকাডেমির পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুু।
অর্কাভর মৃত্যুতে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মিছিল বারাসতে#ieBangla pic.twitter.com/amkmf9TG2B
— IE Bangla (@ieBangla) September 14, 2018
অর্কাভ একজন স্পেশাল চাইল্ড ছিল। স্পেশাল চাইল্ডদের স্কুলেই তাকে ভর্তি করেছিলেন বাবা-মা। স্কুলের পাঁচিল টপকে কী করে ডোবায় পৌঁছল সে, এ প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে সাহা পরিবার। উদ্দীপন অ্যাকাডেমি অর্কাভর এহেন মৃত্য়ুতে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। একটা স্পেশাল চাইল্ড কীভাবে শিক্ষিকাদের চোখের আড়াল হল? কেন কেউ টের পেলেন না?
শোকার্ত বাবা অনীশ সাহা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "আমাদের বলা হয়েছে ডোবা থেকে পাওয়া গিয়েছে আমার ছেলেকে। কিন্তু আমরা কেউ দেখিনি ডোবা থেকে ওকে তুলতে। জলে ডুবে মারা যাবেই বা কীভাবে? যেখান থেকে ওকে তোলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে, সেখানে পানাতে ভর্তি। জল কিছুটা দূরে। জলে ডুবে মারা যাওয়ার কোনও লক্ষন দেখিনি।" অনীশবাবু আরও বলেন, "আমরা তো ভাল ছেলেকে স্কুলে পাঠালাম। ওদের তো দায়িত্ব ছেলেকে দেখা। ডোবাতে কীভাবে গেল ও? কী ঘটেছিল সেদিন, সত্যিটা জানতে চাই।"
ফুটফুটে বোনপোকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ অর্কাভর মাসি পলি মণ্ডল বলেন, "আমাদের একটাই দাবি, আসল ঘটনা সামনে আসুক। স্কুলে একটা বাচ্চাকে পাঠালাম অথচ সে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরল না। কীভাবে স্কুলের গেট খুলে বাচ্চাটা বাইরে গেল? স্কুলের উঁচু পাঁচিল টপকেই বা কীভাবে গেল? সত্য়িটা জানতে চাই। স্কুলের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়।"
ঘটনা প্রসঙ্গে অর্কাভদের অ্যাপার্টমেন্টেরই এক বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য ঘোষ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "স্কুলের তরফে বলা হয়েছে, অর্কাভ কখন বেরিয়ে গেছে তাঁরা খেয়াল করেননি। আসলে সেদিন স্কুলে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। স্কুলে টাকাপয়সা দিয়েছেন ওঁরা। এ নিয়েই উৎসবের মেজাজে ছিলেন শিক্ষিকারা। ওঁরা ওইদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করছিলেন। কিন্তু শিক্ষক দিবস তো আগেই হয়ে গিয়েছে।" যখন তখন বাপ্পাদিত্য়বাবুর ঘরে ঢুকে পড়ত অর্কাভ, সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে তিনি স্কুলের বিরুদ্ধে আরও বললেন, "ওই স্কুলের কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। স্কুলে স্পেশাল চাইল্ডদের পঠনপাঠনের ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অথচ মাস শেষে মোটা টাকা নিত।"
অর্কাভর মৃত্যুতে স্মরণসভা বারাসতে
#ieBangla pic.twitter.com/LVKX0i0R88— IE Bangla (@ieBangla) September 14, 2018
আরও পড়ুন, খুদের প্রথম স্কুল? অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এই দিকগুলো
ইতিমধ্য়েই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বারাসত থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এফআইআরের ভিত্তিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল ও ক্লাস টিচারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও পরের দিনই তাঁরা জামিন পেয়ে যান। এ প্রসঙ্গে বারাসত থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানালেন, "অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেইমতো গ্রেফতারও করা হয়। আইন অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।" তবে অর্কাভর জ্যেঠু গৌতম সাহার অভিযোগ, "৩০২ ধারা যোগ করেনি পুলিশ, ৩০৪ এ ধারা শুধু যোগ করেছিল, ফলে জামিন যোগ্য হওয়ায় ওঁরা জামিন পেয়ে যান।" গৌতমবাবু আরও জানান, "আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা এ নিয়ে বারাসাত আদালতে পিটিশন দাখিল করব।"
অর্কাভর অকালমৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বারাসত। স্কুলের গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব এলাকাবাসীরা। কয়েকদিন আগেই বারাসত ১নং প্ল্যাটফর্মে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। অর্কাভর মৃত্যুর প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিলেও হাঁটেন এলাকাবাসীরা। একটাই দাবি, অর্কাভ আর ফিরবে না, কিন্তু যাঁদের জন্য অর্কাভর এই পরিণতি, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে অর্কাভর মতো আর কারও এমন পরিণতি না হয়।