স্কুল ছাত্রের হাতে পিস্তল! আত্মহত্যা না খুন, ধন্দে পুলিশ

কেতুগ্রামে গন্ডগোল মানেই গুলিগোলা। এখানে দিনদুপুরে খুনও হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক। তাই এই এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সহজেই পাওয়া সম্ভব। গ্রাম বাংলার গরীব ঘরের ১৫ বছরের এক কিশোরের পক্ষেও।

কেতুগ্রামে গন্ডগোল মানেই গুলিগোলা। এখানে দিনদুপুরে খুনও হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক। তাই এই এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সহজেই পাওয়া সম্ভব। গ্রাম বাংলার গরীব ঘরের ১৫ বছরের এক কিশোরের পক্ষেও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
suicide

কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পেল এক ১৫ বছরের কিশোর? প্রতীকী ছবি।

মফস্বলের স্কুল-ছাত্রের হাতে পেনের বদলে ৭এমএম পিস্তল। সেই পিস্তলের এক গুলিতেই প্রাণ গেল দশম শ্রেণীর ছাত্র কলিম শেখের। কলকাতা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে কেতুগ্রামের ঘটনা। স্কুলের প্রার্থনা শেষ হওয়ার পরই বাথরুমে জোরালো শব্দ। সেখানে গিয়ে শিক্ষকরা দেখলেন, রক্তাক্ত নিথর দেহ কলিমের। পাশে পড়ে রয়েছে ৭এমএম পিস্তল। এই ঘটনায় তাজ্জব বনে গিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কর্তারা। ওই ছাত্রের কাছে কোথা থেকে এলো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র? পশ্চিমী দেশের সংস্কৃতি একেবারে রাজ্যের প্রত্যন্ত এক গ্রামে! আপাতত, এই ঘটনা আত্মহত্যা না খুন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Advertisment

কী হয়েছিল স্কুলে? কেতুগ্রামের দধিয়া গোপালদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে সবে প্রার্থনা শেষ করেছে পড়ুয়ারা। এক এক করে ছাত্র-ছাত্রীরা পা বাড়াচ্ছে ক্লাস রুমের দিকে। ঠিক এই সময় কানফাটা গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে স্কুল চত্বর। আতঙ্কে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয় পড়ুয়ারা। স্কুলের শৌচাগার থেকেই গুলির শব্দ, সেখানে ছোটেন শিক্ষকরা। সেখানে পৌঁছে চক্ষুস্থির তাঁদের। স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র কলিম শেখের (১৫) রক্তাক্ত দেহ শৌচাগারের মেঝেতে পড়ে রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে একটি পিস্তল। অঘটন ঘটেছে বুঝেই তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। স্কুলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, প্রণয়ঘটিত কারণেই আত্মহত্যা করেছে ওই ছাত্র। যদিও কলিমের পরিবারের অভিযোগ, সে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে কেউ গুলি করে খুন করেছে।

Advertisment


কলিমের বাবা সেখ সেলিম দিনমজুর। বাড়ি রতনপুরে। কাজের সূত্রে বাবা থাকেন কেরালায়। বোন ও মায়ের সঙ্গে রতনপুরেই থাকত কলিম। রোজকারের মতোই মঙ্গলবারও সে স্কুলে এসেছিল। কলিমের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব এক কিলোমিটারের কম। জনৈক শিক্ষক জানান, ছাত্রটির মাথার ডানদিক থেকে গুলি ঢুকে বাঁদিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, "ওই ছাত্র স্কুলে এলেও এদিন প্রার্থনাতে অংশ নেয়নি। প্রার্থনা শেষ হওয়ার পরই স্কুলের শৌচাগার থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়।"

এদিকে কলিমের পরিবার এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলতে নারাজ। তার মা মোসলেমা বিবি বলেন, "আমাদের ঠিকমত সংসারই চলে না। সেখানে পিস্তল কেনার টাকা কোথা থেকে পাবে আমার ছেলে? ওকে ওর বন্ধুরাই খুন করেছে।" কেন খুন করেছে? সেই কারণ অবশ্য অজানা মৃতের মায়ের। তিনি এখনও পুলিশের কাছে অভিযোগও জানাননি। পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীন) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আত্মহত্যা না খুন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিস্তলই বা কোথা থেকে এল, তারও তদন্ত চলছে।

ঘটনার পরেই ওই স্কুলের পড়ুয়ারা স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করার পাশাপাশি শৌচাগার সিল করে দেয়। মৃতদেহটি পাঠানো হয়েছে ময়না তদন্তে। ঘটনাস্থলে যান রাজনারায়ণবাবু। স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তিনি কলিমের পরিজনদের সঙ্গেও কথা বলেন। পুলিশের অনুমান, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছে কলিম। ওই স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ওই ছাত্রী স্কুলেরই আর এক ছাত্রের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সেই নিয়েই বিবাদ চলছিল অনেকদিন ধরেই।

পুলিশের দাবি, স্কুলের ব্যাগে করেই পিস্তল নিয়ে এসেছিল কলিম। কিন্তু পিস্তল পেল কোথা থেকে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এলাকাবাসীদের দাবি, রতনপুর, খাসপুর ও রাজওয়ার, এই সব এলাকায় নিত্য রাজনৈতিক গণ্ডগোল লেগেই থাকে। কেতুগ্রামে গন্ডগোল মানেই গুলিগোলা। এখানে দিনদুপুরে খুনও হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক। তাই এই এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সহজেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু গ্রাম বাংলার গরীব ঘরের ১৫ বছরের এক কিশোরের পক্ষেও পিস্তল এতটা সহজলভ্য, এই মারাত্মক সত্যটা স্বীকার করে নিতে মন চাইছে না কারোরই।