Militant at jammu kashmir: তীর্থযাত্রী বোঝাই বাস লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। আর, তাতেই বাস খাদে পড়ে গিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে ৯ জন প্রাণ হারালেন। আহত অন্তত ৩৩ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে রিয়াসি এলাকায়।
এই ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহিতা শর্মা জানিয়েছেন, ‘আমরা যা রিপোর্ট পেয়েছি, তাতে জঙ্গিরা ওঁত পেতে ছিল। ওরা বাসে গুলি চালায়। বাসটা শিবপুরী থেকে কাটরায় ফিরছিল। বাসে গুলি চালানোর ফলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি খাদে পড়ে যায়। উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। ৯ জন মারা গিয়েছেন। ৩৩ জন হাসপাতালে। তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। বাসযাত্রীরা কেউ স্থানীয় নন। তাঁদের পরিচয় এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে, যতদূর জানা গিয়েছে, যাত্রীরা সব উত্তরপ্রদেশের।’
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই পুলিশ সবসময় সতর্ক হয়ে যায়। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়। শিবপুরী মন্দিরকে ইতিমধ্যে সুরক্ষিত করা হয়েছে। মন্দিরের আশপাশের এলাকাতেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।’ পুলিশ সুপার, ডেপুটি কমিশনার বিশেষ পাল মহাজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুই মুখঢাকা জঙ্গি বাসটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাতেই বাসের যাত্রী এবং চালক আহন হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অন্ততপক্ষে তিন জন যাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই দাবি সত্যতা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে।
আরও পড়ুন : < Sealdah Division: সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই ডাহা ফেল পূর্বরেল! চূড়ান্ত দুর্ভোগে নাকাল শিয়ালদহ শাখার যাত্রীরা >
এমনিতে কাশ্মীরে যাঁরা ত্রিকূট পাহাড়ে মাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যান, তাঁরা কাটরা শহরকে বেস ক্যাম্প হিসেবে বেছে নেন। সেই কাটরাতেই ফিরছিল বাসটি। গিয়েছিল রনসুতে বিখ্যাত শিবখোরি মন্দিরে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং জম্মু-কাশ্মীরের ডিজিপির কথা হয়েছে। তিনি তাঁদের থেকে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট চেয়েছেন। শাহ বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত কাজকে মোটেই বরদাস্ত করা হবে না। এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে পোস্ট করেছেন, ‘যেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং এনডিএ সরকার শপথ নিচ্ছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতারা সেই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত, সেদিনই বাসে তীর্থযাত্রীদের ওপর এই কাপুরুষোচিত হামলা করা হয়েছে। যাতে বেশ কিছু প্রাণহানি হয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে পহেলগাঁওয়ে তীর্থযাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। পাশাপাশি, জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি কাপুরুষোচিত হামলা হয়েছে। বুক ফুলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর বড়াই করা মোদী তথা এনডিএর দাবি, ফাঁকা বুলি বলে প্রমাণ হল।’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, ‘এটাই জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির আসল ছবি।’
আরও পড়ুন : < Modi Cabinet 2024: শপথ নিয়েই ‘অ্যাকশনে’ মোদী, হাজার হাজার কোটির অনুমোদন, কোন খাতে? >
রবিবার যেখানে হামলা হয়েছে, সেই রিয়াসির পৌনি এলাকাটি রজৌরি জেলার সংলগ্ন। এই নিয়ে এই জেলায় দ্বিতীয়বার তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হল। এর আগে, ২০২২ সালের মে মাসে বৈষ্ণোদেবী তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা হয়েছিল। তাতে চার জন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২৪ জন আহত হয়েছিলেন। জঙ্গিদের রাখা বোমা বিস্ফোরণে কাটরা থেকে জম্মুগামী বাসে আগুন ধরে গিয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে রাজৌরি এবং পুঞ্চ জেলায় জঙ্গিহানায় ৩৮ জওয়ান এবং ১১ সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দূরে থাকা জেলাটি গত প্রায় দুই দশক ধরে শান্তিপূর্ণ ছিল। রাজৌরি, পুঞ্চ এবং রিয়াসি জেলা ৯০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিক পর্যন্ত জঙ্গিবাদের কেন্দ্রস্থল ছিল। কিন্তু তারপরে ২০২১ সালে রাজৌরি এবং পুঞ্চে জঙ্গি কার্যকলাপের ব্যাপক হ্রাস পায়। তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠে ওই এলাকা।
কৌশলগতভাবে, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তাদের মতে, এই তিনটি জেলা তাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রয়েছে ঘন বনাঞ্চল। সেটাকেই কী কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা? একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এলাকার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জঙ্গিরা বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। তিনি বলেছেন যে রবিবারের সন্ত্রাসী হামলা সম্ভবত রাজৌরি এবং পুঞ্চে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জঙ্গিদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এসেছে।
২০২১ সাল থেকে, রাজৌরি এবং পুঞ্চ উভয় জেলায় জঙ্গি হামলায় মোট ৩৮ জন সেনা এবং ১১ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে প্রায় দুই ডজন সেনা এবং সাতজন নীরিহ মানুষ নিহত হয়েছেন।