সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে বিলকিস বানো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হল মহারাষ্ট্র। তাতে ধাক্কা খেয়েছে গুজরাত সরকার। কারণ, গুজরাত সরকার ক্ষমা করার পর ১১ জন দোষী মুক্তি পেয়েছিল। তার পর মুক্তিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন অসংখ্য বিজেপি নেতা। ব্যতিক্রম মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তিনি মুক্তিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানাতে অস্বীকার করেছিলেন। ওই মুক্তির তিন দিনের মধ্যে মহারাষ্ট্রের ভান্ডারায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। দুই ব্যক্তি একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি ওঠে মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের আলোচনায়। মহারাষ্ট্রে মহিলাদের সুরক্ষা ইস্যুতে সেই আলোচনায় ফড়নবিশ ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট বলেন, 'একজন সদস্য বিলকিস বানো মামলাটি উত্থাপন করেছেন। এখানে এটি উত্থাপন করার দরকার ছিল না। দোষীরা তাদের সাজা ভোগ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে তারা মুক্তি পেয়েছে। তবে যে কোনও আসামিই হোক না কেন, তাদের মুক্তির জন্য অভিনন্দন জানানো ভুল। একজন দোষী সাব্যস্তকে অভিনন্দন জানানো যায় না।'
পরে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে আলোচনার সময়, ফড়নবিশকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে বিজেপির মধ্যে থেকে সতর্ক করা হয়েছে কি না? জবাবে ফড়নবিশ বলেন, 'আমাকে দলের কেউ প্রশ্ন করেনি। আমি যা ভেবেছিলাম তাই বলেছি।' বিলকিস বানো মামলায় সাজা মকুব করে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্ত করা নিয়ে গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, 'গুজরাত সরকারের সাজা মকুবের আবেদন গ্রহণ করা বা সাজা মকুবের নির্দেশ দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার ছিল না।' কারণ, ঘটনাটি গুজরাতে হলেও বিচার প্রক্রিয়া চলেছে মুম্বইয়ে। সেখানে একটি বিশেষ আদালত ২০০৮ সালে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে যে সাজা মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেই রাজ্য সরকারই উপযুক্ত, যেখানে দোষীদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উপযুক্ত হল মহারাষ্ট্র সরকার।
আরও পড়ুন- মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফর ঘিরে উত্তাল মালদ্বীপ, কিন্তু, কেন?
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন রাধেশ্যাম শাহ। মুম্বইয়ের একটি সিবিআই আদালত তাকে ১৫ বছর এবং চার মাস যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তা পূর্ণ করার পরে, ২০২২ সালে কারাদণ্ড মকুবের জন্য রাধেশ্যাম সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তখন মহারাষ্ট্রে 'মহাবিকাশ আঘাড়ি' সরকার ক্ষমতায় ছিল। ১৩ মে, ২০২২ তারিখের একটি আদেশে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রাস্তোগি ও বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ গুজরাত সরকারকে 'দুই মাসের মধ্যে' অকাল মুক্তির ব্যাপারে শাহের আবেদন বিবেচনা করতে বলেছিল। এই বলে দায়িত্ব দিয়েছিল যে, গুজরাত সরকার হল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে, 'উপযুক্ত'। যা এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ অবস্থানের সম্পূর্ণ বিরোধী। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ১৫ অগাস্ট, গুজরাত সরকারের ক্ষমা এবং অকাল মুক্তি নীতির জেরে ১১ আসামিকে মুক্তি দিয়েছিল।