ডিজাইনারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের স্ত্রী অমৃতা ফড়নবিশের সরাসরি এক কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব, সেই সঙ্গে হুমকি, ষড়যন্ত্রের মত অভিযোগে মুম্বই পুলিশের দ্বারস্থ অমৃতা। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের স্ত্রী অমৃতা ফড়নবিশকে ব্ল্যাকমেল করার মত মারাত্মক অভিযোগ। তদন্ত চালাচ্ছে মুম্বই পুলিশ। স্ত্রী অমৃতার করা অভিযোগে নাম জড়ায় অনিল জয়সিংহনিরও। এবিষয়ে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের বক্তব্য এবার সামনে এসেছে।দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এই গোটা ঘটনায় উলহাসনগরের ব্যাটিং চক্রের পাণ্ডা অনিল জয়সিংহের নাম সামনে এনেছেন।
বুধবার বিধানসভায় ফড়নবিশ বলেন, 'অনিল জয়সিংহনি গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে পলাতক। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ১৪টির বেশি মামলা রয়েছে। তার মেয়ের বিরুদ্ধে অমৃতাকে কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি হুমকি, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশের স্ত্রী অমৃতা। তিনি বলেন, ২০১৫-২০১৬ সাল থেকেই ওনার অমৃতার সঙ্গে যোগাযোগ। মাঝে বেশ কয়েকবছর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও ২০২১ সালে ‘অনিক্ষা’ আবার আমার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন'।
অনিল জয়সিংহনি কে?
ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মুম্বই ও আশেপাশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। তিনি বাজি মামলায় এর আগে তিনবার ধরাও পড়েছেন এবং পাঁচটি রাজ্যে সাতটিরও বেশি মামলায় তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড। ২০১৫ সালের মে মাসে, ED-এর গুজরাট ইউনিট জয়সিংহনির দুটি বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের অধীনে একটি মামলা দায়ের করে। বেশ কিছুদিন তিনি পলাতক ছিলেন এবং আট মাস পরে বোম্বে হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেন তিনি। ২০১৬ সালে, অনিল জয়সিংহনির বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের দুটি থানায় প্রতারণা এবং জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়।
মুম্বই পুলিশের একজন সিনিয়র অফিসার ইংরেজি পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আহমদাবাদ সেশন কোর্ট তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা জারি করার পর অসুস্থতার অজুহাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে একটি জাল মেডিকেল সার্টিফিকেট বের করে তিনি দাবি করেন যে তার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার পরীক্ষা করাতে হবে। পরে দেখা যায় সেই মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জাল'।
আজাদ ময়দান পুলিশ পরে জানতে পারে অনিল জয়সিংহনি মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সই জাল করেছেন। ১লা মে ২০১৬-এ, জয়সিংহনির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির একটি মামলা দায়ের করা হয়। তিন বছর ধরে পুলিশ তাকে খুঁজে না পেলে গত বছর হাইকোর্ট তাকে অপরাধী ঘোষণা করে।
পুলিশের পাশাপাশি, ইডি আধিকারিকরাও মুম্বই, থানে, গোয়া, অসম এবং মধ্যপ্রদেশে্র একাধিক জায়গায় তার খোঁজ চালায়। জয়সিংহের বিরুদ্ধে মামলা করা অভিযোগকারীর এক আত্মীয় বলেন, 'অনিল জয়সিংহনি জনগণকে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে টাকা আদায় করেন। উনি আমার মামাকে ধর্ষণ ও মাদকের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।
বোম্বে হাইকোর্টে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের জবাবে, গোয়া পুলিশ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে-এ জানায়, 'পলাতক আসামি অনিল জয়সিংহি এবং তার মেয়ে অনিক্ষা খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের স্থানীয় পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। পলাতক আসামি শনাক্ত হলেই সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, আজাদ ময়দান পুলিশ উলহাসনগরে জয়সিংহের বাড়ি সিল করে দেয়।
তার মেয়ে ‘অনিক্ষা’ পেশায় এক ডিজাইনার। তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন অমৃতা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা এফআইআরে হুমকি, ষড়যন্ত্রের অভিযোগের পাশাপাশি ওই ডিজাইনারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার মত অভিযোগ আনা হয়েছে। এফআইআর অনুসারে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে একটি ফৌজদারি মামলায় সরাসরি অমৃতার “হস্তক্ষেপ” চেয়েছেন ওই মহিলা এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
অমৃতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র) এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৮৮-এর ৮ এবং ১২ নং ধারায় অনিক্ষা এবং তার বাবার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে৷ এফআইআর-এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, মুম্বই পুলিশের একজন সিনিয়র আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে তদন্ত চলছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
জানা গিয়েছে ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অমৃতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন ওই মহিলা। ২০ ফেব্রুয়ারি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। অমৃতা মহিলার বাবার বিরুদ্ধেও হুমকি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগও করেছেন। পুলিশ ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির ধারায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।