Advertisment

প্রখর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, বিশ্বকে জাপানের 'জাত' চিনিয়েছিলেন আবে

শুক্রবার সকালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে একটি সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আবে। ঠিক সেই সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Who is Shinzo Abe, Japan’s former prime minister updates

নিহত জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।

গুলিবিদ্ধ জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শারীরিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-র খবর অনুযায়ী শুক্রবার সকালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে একটি সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আবে। ঠিক সেই সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আবেকে। এই মুহূর্তে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন ৬৭ বছরের এই রাজনীতিবিদ।

Advertisment

যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৮ বছর ও তারও আগে ২০০৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০২০-এর অগাস্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন আবে। পরে তিনি জানান, আলসারেটিভ কোলাইটিসের জন্য চিকিত্সা চলছে তাঁর, দীর্ঘস্থায়ী এই পেটের রোগের কারণে প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কাজ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

শরীর সায় দিচ্ছিল না বলেই গুরু-দায়িত্ব থেকে নিজেই অব্যাহতি নিয়ে নেন আবে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সহকর্মী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র নেতা ইয়োশিহিদে সুগা। পরে তাঁর জায়গায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেন ফুমিও কিশিদা।

তবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে আবে জাপানের এলডিপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আবে জাপানের বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক নীতিতে একটি অমার্জনীয় চিহ্ন রেখে গিয়েছেন। বরাবর অন্য দেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আরও মজবুত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করায় তাঁর জুড়ি মেলা ছিল ভার। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আবে তাঁর ট্রেডমার্ক 'অ্যাবেনোমিক্স' নীতির মাধ্যমে জাপানি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

আপাতমস্তক একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আবে। তাঁর পিতামহ নোবুসুকে কিশিও ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শিনজো আবের বাবা শিনতারো আবে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত জাপানের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।

আরও পড়ুন- ভরা সভায় গুলি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে, হইচই পড়ে যাওয়া খবরে হুলস্থূল-কাণ্ড

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে আবের একাধিক সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে দেশের অন্দরেই আবেকে অনেক প্রশ্ন-বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে এত কিছুর পরেও কর্তব্যে অবিচল থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করে গিয়েছেন আবে।

জাপানকে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর চেষ্টায় খামতি ছিল না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে তাঁর অর্থনৈতিক নীতি আবেকে বাড়তি অ্যাডভান্টেজ জুগিয়েছিল। তারই বলে ২০১২ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আবে। জাপানের ইতিহাসে শিনজো আবের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক পর্যবেক্ষক তাঁকে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।

শিনজো আবের একাধিক সিদ্ধান্তে জাপানে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তার অন্যতম ছিল সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদের সংশোধন করা। যেখানে বলা হয়েছে, "জাপানের জনগণ চিরকালের জন্য জাতির সার্বভৌম অধিকার হিসেবে যুদ্ধ ত্যাগ করবে।" দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর এই অনুচ্ছেদটি জাপানের নতুন সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বিদেশে যুদ্ধের জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছিলেন আবে। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দেশের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার কৃতিত্বও তাঁরই ঝুলিতে রয়েছে। মূলত তাঁরই নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কে আমূল বদল আসে। তিনিই প্রথম জাপানি প্রধানমন্ত্রী যিনি ২০১৪ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।

Japan Shot at Leader
Advertisment