শিশুমৃত্যুর জের, কঠোর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, শিশুদের ক্ষেত্রে বিতর্কিত কাশির সিরাপ অনিরাপদ সাফ জানিয়ে দিল WHO। ভারতের মেরিয়ন বায়োটেকের তৈরি কাশির সিরাপে মিলেছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক আর তা সেবনেই মৃত্যু হয়েছে ১৮ শিশুর উজবেকিস্তানের এমন দাবির পর নড়েচড়ে বসে ভারত সেই সঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও কাশির সিরাপ ব্যবহারে সতর্ক করে। এবার সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করেছে যে দুটি কাশির সিরাপ ব্যবহার না করার।
বুধবার WHO জানিয়েছে সংস্থার তৈরি কাশির সিরাপ সঠিক গুণমান পূরণে ব্যর্থ। এই কাশির সিরাপ ব্যবহারে শিশুদের ক্ষতি হতে পারে, তাই এই সকল সিরাপ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। যে দুটি সিরাপ ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলি হল 'AMBRONOL Syrup এবং DOK-1 Max Syrup'।
গত বছরের ডিসেম্বরে, উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য দফতর দাবি করে যে কাশির সিরাপ সেবনে মৃত্যু হয়েছে ১৮ শিশুর। উজবেকিস্তান সরকার শিশুদের মৃত্যুর জন্য একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিকে দায়ী করেছে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওষুধ কোম্পানি মেরিয়ন বায়োটেকের তৈরি ডক-১ ম্যাক্স সিরাপ সেবনের ফলেই ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ২০১২ সালে উজবেকিস্তানের বাজারে তাদের পণ্য বিক্রির অনুমতি পায়। সূত্রের খবর, এই কোম্পানির তৈরি ডক-১ ম্যাক্স সিরাপ বর্তমানে ভারতের বাজারে বিক্রি হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, কাশির সিরাপে ডাইথাইলিন গ্লাইকল এবং ইথিলিন গ্লাইকল শিশুদের জন্য বিষের সমান।
আরও পড়ুন: < কর্ণপ্রয়াগের একাধিক বাড়িতে ফাটল, উত্তরাখণ্ডে বাড়ছে বিপদ >
উত্তরপ্রদেশ ড্রাগ কন্ট্রোলার এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) ইতিমধ্যেই উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ম্যারিয়ন বায়োটেককে। সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংস্থার তৈরি কাশির সিরাপ সেবনে মৃত্যু হয় ১৮ শিশুর। এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছে উজবেকিস্তান। উজবেকিস্তানের দাবির পর উত্তরপ্রদেশ ড্রাগ কন্ট্রোলার এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) বিষয়টি নিয়ে যৌথ তদন্ত করে এবং সংস্থাকে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।উত্তরপ্রদেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার ইউনিটের সমস্ত ওষুধের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে সিরাপের একটি ব্যাচের ল্যাব পরীক্ষায় “ইথিলিন গ্লাইকোল” এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, একটি বিষাক্ত রাসায়নিক। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বাড়িতে শিশুদের সিরাপ দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। এই সিরাপটি নির্ধারিত ডোজের চেয়ে বেশি মাত্রায় শিশুদের দেওয়া হয় যার জেরেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ১৮শিশুর।
মন্ত্রক জানিয়েছে হাসপাতালে ভর্তির আগে, শিশুরা দুই থেকে সাত দিন বাড়িতে এই সিরাপ সেবন করে। ২.৫ থেকে ৫ মিলি দিনে তিন থেকে চার বার এই সিরাপ শিশুদের দেওয়া হয়। যা শিশুদের আদর্শ ডোজের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৮ শিশুর মৃত্যুর পর দেশের সব ফার্মেসি থেকে ডক-১ ম্যাক্স ট্যাবলেট ও সিরাপ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক।