সরকারি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে লেখা সম্পাদকীয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্-নির্বাচনী বক্তৃতার বিরুদ্ধে মন্তব্য, বিতর্কিত অডিও-সহ একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে হাউজিং সোসাইটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা- এই সব কিছুর বিরুদ্ধেই ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য মামলা রুজু হয়েছে। এই আইনে সর্বোচ্চ তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সঙ্গে জরিমানার কথা বলা আছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে দায়ের হওয়া ১৪টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাই প্রমাণ করেছে যে বিজেপি থেকে কংগ্রেস- সব দলই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে। এই বিষয়গুলো রীতিমতো তাত্পর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর, সুপ্রিম কোর্ট খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে যে এই সংক্রান্ত মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো যায় কি না।
যে ১৪টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে বিজেপিশাসিত ইউপি সবচেয়ে বেশি চারটি মামলা দায়ের করেছে। যার মধ্যে একটি, সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্যের জন্য উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন রাজ্যপাল আজিজ কুরেশির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলির মধ্যে দুটি উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে। এর পরই রয়েছে ছত্তিশগড়ের দুটি মামলা। যার মধ্যে একটি দায়ের হয়েছে পুলিশের প্রাক্তন আইজির বিরুদ্ধে। কারণ, তাঁর লেখা সরকারের গাত্রদাহর কারণ হয়েছে। তালিকার সর্বশেষটি সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল। গত মাসে মুম্বইয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাসভবনের বাইরে হনুমান চালিশা পাঠ করার হুমকি দেওয়ার জন্য এমএলএ-এমপি দম্পতি রবি এবং নবনীত রানার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে।
আরও পড়ুন- কয়লাকাণ্ডে চরম অস্বস্তিতে অভিষেক-পত্নী, জামিন অযোগ্য ধারায় জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
অন্যান্য মামলাগুলি পাকিস্তানপন্থী স্লোগান দেওয়া, পুলিশের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ইউপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মন্তব্য, কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের ওপর কামান নিয়ে আক্রমণের হুমকি এবং একটি নতুন তামিল জাতীয়তাবাদী পতাকা তৈরির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে।
এই ১৪টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ৪টি মামলা হল-
বিজনোর পুলিশ ৩ ফেব্রুয়ারি সপা-আরএলডি প্রার্থী ড. নীরজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করেছে। কারণ, তাঁর সমর্থকরা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল। তার জেরেই মামলা হয়েছে। যদিও প্রার্থী নীরজ চৌধুরী অডিওটি সম্পর্কে পুলিশের ব্যাখ্যাকে ভ্রান্ত বলে দাবি করেছেন। আর বলেছেন যে তাঁর সমর্থকরা আসলে তাঁর সহযোগী আকিব আনসারির প্রশংসা করছিলেন। সেটাকেই পুলিশ উলটো মানে করেছে। ভিডিওটি পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এখনও আসেনি।
দ্বিতীয়টি হল, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বারাণসী পুলিশ কংগ্রেস নেতা অজয় রাইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে। কারণ, তিনি ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছিলেন। সেই তদন্ত এখনও চলছে।
তৃতীয়টি হল, গত সেপ্টেম্বরে, উত্তরপ্রদেশের রামপুরের পুলিশ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল আজিজ কুরেশির বিরুদ্ধে দায়ের করেছে। কুরেশি জেলে বন্দি সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার পর রাজ্য সরকারের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি নেতা আকাশ সাক্সেনার অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলার তদন্ত এখনও চলছে।
এছাড়াও গত অক্টোবরে আগরা পুলিশ কাশ্মীরের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া আর্শিদ ইউসুফ, ইনায়ত্ আলতাফ শেখ ও শওকত আহমেদ গনাইকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচের পর তারা পাকিস্তানের জয়ের জন্য আনন্দ করেছিল। হোয়াটসঅ্যাপে ভারতের বিরুদ্ধে বার্তাও চালাচালি করেছিল। তিন জনই জম্মু-কাশ্মীরের পড়ুয়া হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদান পাচ্ছিল। এদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়েছে। মামলা চালানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জমা পড়েছে।
Read story in English