Ramsevakpuram Ayodhya: ২২ জানুয়ারি রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। শুরু হয়ে গিয়েছে পূজার্চনা। অযোধ্যায় ভিড় জমেছে রামভক্তদের। নির্মীয়মান মন্দির দর্শনের সঙ্গেই পূণ্যার্থীদের ঢল অযোধ্যায় অবস্থিত চার একরের রামসেবকপুরমেও। সেখানেই নজর কাড়ছে রামভক্তির এক অন্য ছবি। রামসেবকপুরমে টিনের চালার নীচে রয়েছে আটটি পাথর। ভক্তদের অনেকেই সেইসব পাথর স্পর্শ করে, কেউ কেউ আবার তাতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করছেন।
কেন এই আচরণ? টিনের চালার নীচে রাখা আটটি পাথরের টুকরো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। ভক্তদের কাছে রামলালার মূর্তির মতোই এসবের তাৎপর্য। পূর্ণ্যার্থীরা এইসব পাথরগুলিই দেখতে এবং স্পর্শ করতে আগ্রহী। এই পাথরগুলি রামলালার মূর্তির জন্য আনা হয়েছিল, কিন্তু পরে, মহীশুরের ভাস্কর অরুণ যোগীরাজের ৫১ ইঞ্চি লম্বা মূর্তিটি বেছে নেওয়া হয়।
রামসেবকপুরম বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়। এর আগে এটি ছিল গোলাপী বালি পাথরের কাটাই ও খোদাই করার কর্মশালা। খোদাই করা এসব পাথরই ব্যবহার করা হয়েছে রামমন্দিরে। রামজন্মভূমি এবং হনুমানগড়ি দেখার পর ভক্তরা তাই রামসেবকপুরমে পৌঁছে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- Amazon: দেদার বিক্রি রাম মন্দিরের প্রসাদ, অ্যামাজনকে নোটিস জারি, সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট তলব
শুক্রবার বিকেলে মহারাষ্ট্র থেকে ভক্তদের একটি দল রামসেবকপুরমে পৌঁছলে, স্থানীয় গাইড বিমল কুমার তাঁদের শালিগ্রামের ছয় ফুট উঁচু "দেবশিলায়" নিয়ে যান, যা গত ফেব্রুয়ারিতে নেপাল থেকে আনা হয়েছিল রামলালার মূর্তি তৈরির জন্য। এটি আটটি পাথরের একটি, দু'টি নেপালের গলেশ্বর ধাম থেকে এবং তিনটি রাজস্থান ও কর্ণাটক থেকে আনা হয়েছিল। ভক্তরা এইসব পাথর পরিক্রমা করেন ও 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দেন এবং দানপত্রে নগদ প্রদান করেন।
রামসেবকপুরমের পাথর সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি বর্ণনা করে রাজস্থানের সিকার থেকে আসা আমনারাম বলেন, 'আমি শুনেছিলাম যে শালিগ্রাম পাথর রামসেবকপুরমে আনা হয়েছে। এই সমস্ত পাথর পবিত্র। আমি রামমন্দিরের ভিতরের রামলালার মূর্তি কখনই ছুঁতে পারব না, তবে মূর্তি তৈরির জন্য যে পাথরগুলি ছিল আমি তা ছুঁতে পারছি।' উত্তর প্রদেশের মহোবার থেকে আসা ভক্ত রজনীশ পাণ্ডে এইসব পাথরের কাছে গিয়ে নিজের কপাল স্পর্শ করেন। তাঁর কথায়, 'রাম ছিলেন বিষ্ণুর অবতার এবং শালিগ্রামকে বিষ্ণুর একটি রূপ বলে মনে করা হয়। তাই, আমি এখানে শালিগ্রাম এবং অন্যান্য পাথরের পুজো করতে এসেছি।'
মুম্বাইয়ের বজরং দলের কর্মী প্রকাশ বাহেওয়াল বলেন, 'এই পাথরগুলি পূজনীয় কারণ এগুলি ভগবান রামের জন্য আনা হয়েছিল।' বাহেওয়াল দাবি করেছেন যে, তিনি ১৯৮৯ সালে একজন করসেবক হিসাবে প্রথম অযোধ্যায় এসেছিলেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে এই বজরং দলের কর্মী বলেন, 'কর সেবকদের গ্রেফতার করার জন্য তখন চারদিকে পুলিশ ছিল। আজ, সেই পুলিশই আমাদের অযোধ্যায় চলাফেরায় সাহায্য করেছেন। ১৯৮৯ সালে, গ্রেফতারি এড়াতে আমাদের আত্মগোপন করতে হয়েছিল। আজ সেই একই অযোধ্যায় গর্বিতভাবে হাঁটছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কারণেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।'
স্থানীয় ভিএইচপি নেতা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে পাথরগুলি প্রথম খোলা জায়গায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু ভক্তরা আসতে শুরু করলে সেগুলো একটি চালা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার তীর্থযাত্রী এখানে আসেন। রামমন্দির নির্মাণ শেষ হলে এই পাথরগুলো রামজন্মভূমিতে স্থানান্তর করা হবে।' পাথর পুজোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এগুলো আনা হয়েছিল রাম লালা মূর্তির জন্য। তাই ভক্তদের ভক্তি এই পাথরগুলোকে কেন্দ্র করে বাড়ছে।'
আরও পড়ুন- Ayodhya Ram Mandir Inauguration: রাম লালার জমকালো মন্দির- শক্তি নাকি ভক্তি? আলিগড় জুড়ে প্রবল চর্চা
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট তীর্থযাত্রীদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার রামসেবকপুরম চত্বরে একটি বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির চালাচ্ছে। সেই শিবিরে দর্শনার্থীদের চা এবং বিস্কুট দিচ্ছে বিস্ব হিন্দু পরিষদ।
নেপালের জনকপুর থেকে এক সপ্তাহ ধরে হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুটি শালিগ্রাম পাথর অযোধ্যায় আনা হয়েছিল। নেপালের জানকী মন্দিরের পুরোহিতরা ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের হাতে পাথরগুলো তুলে দিয়েছিলেন। এই উপলক্ষে, ৫১ জন পুরোহিত, প্রচুর ভক্তের উপস্থিতিতে প্রার্থনা করেন। জানকী মন্দিরের পুরোহিত রাম তপেশ্বর দাস এবং নেপালের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাইয়ের কাছে শালিগ্রাম পাথর তুলে দিয়েছিলেন।