'প্রধানমন্ত্রী ভারতের জন্য কী সিদ্ধান্ত নেবেন সে সম্পর্কে মালদ্বীপ কেন কিছু বলবে' এমনই মন্তব্য করে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল। দ্বীপরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাক্ষাদ্বীপ সফর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার বিরোধীতা করে 'অবমাননাকর সোশ্যাল মিডিয়া' পোস্ট করেন। এরপরই মালদ্বীপের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল।
মোদী গত ৩রা জানুয়ারি লাক্ষাদ্বীপ সফরের কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে তাকে হাঁটতে এবং সৈকতের দৃশ্য উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি তিনি দ্বীপটিকে ভারতীয়দের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফর ও সেখানের পর্যটনকে প্রচার নিয়েই আপত্তি মলদ্বীপের। সে দেশের এক নেতার দাবি, নাম না করলেও মলদ্বীপকে ‘হেয়’ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গোটা ঘটনায় লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল মালদ্বীপকে নিশানা করেছেন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, মহম্মদ ফয়জল বলেন, "লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে আরও বেশি সাফল্য পেলে,তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। তাতে মালদ্বীপের সমস্যা কোথায়?"বিতর্ক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের সূত্রপাত হয় যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর লাক্ষাদ্বীপ সফরের ভিডিও পোস্ট করেন। ওই ভিডিওতে তিনি দেশবাসীর কাছে বিদেশে না ছুটে, দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখারই আর্জি জানান। যেহেতু লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে মলদ্বীপে অনেকটাই মিল, তা নিয়েই সমস্যা। মলদ্বীপের এক মন্ত্রী দাবি করেন, ওই ভিডিও পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী মোদী মলদ্বীপকেই আক্রমণ করেছেন। সমুদ্র সৈকত পর্যটনের ক্ষেত্রে মলদ্বীপের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ভারত, এমনটাও দাবি করেন তিনি। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। লাক্ষাদ্বীপ বনাম মলদ্বীপ দ্বন্দ্বের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও ভারতকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় মলদ্বীপ সরকার তাদের তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে।
মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদও প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে মরিয়ম শিউনার অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা করেছেন এবং একে "ভয়াবহ ভাষা" বলে অভিহিত করেছেন।পরবর্তীকালে মালদ্বীপ সরকার তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে এবং বিতর্ক থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, দাবি করে যে মন্তব্যগুলি একান্তই তাদের "ব্যক্তিগত মতামত" বলে উল্লেখ করেছে। মালদ্বীপ সরকার বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফর ঘিরে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পোস্ট করা রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ "কোন সঙ্কোচ বোধ করবে না"।
মালদ্বীপের প্রাক্তন মন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ রবিবার বলেছেন যে ভারতীয়রা যদি মালদ্বীপকে পর্যটনস্থল হিসাবে বয়কট করে তবে তা দ্বীপ রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। মালদ্বীপের মন্ত্রীদের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে, অক্ষয় কুমার, সলমান খান, জন আব্রাহাম এবং শ্রদ্ধা কাপুর কঙ্গনা রানাউত সহ একাধিক সেলিব্রিটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে তাঁকে উপহাস করার জন্য মালদ্বীপের সমালোচনা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা মালদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা হচ্ছে বিশ্বজুড়েই। এরই পরিপ্রেক্ষিপ্তে মালদ্বীপ সরকার তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরীফ এবং মাহজুম মজিদকেও বরখাস্ত করেছে। এদিকে, মালদ্বীপের সাংসদ এবং প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ইভা আবদুল্লাহ এই পুরো বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেন, 'মইজ্জু সরকারের উচিত ভারতীয়দের কাছে ক্ষমা চাওয়া'।
কী বললেন মালদ্বীপের সাংসদ ইভা আবদুল্লাহ?
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, মালদ্বীপের সাংসদ ইভা আবদুল্লাহ বলেছেন, "এটি গুরুত্বপূর্ণ যে মালদ্বীপ সরকার মন্ত্রীর মন্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। আমি জানি সরকার মন্ত্রীদের বরখাস্ত করেছে, কিন্তু আমি মনে যে মালদ্বীপ সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মন্ত্রীর মন্তব্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, বর্ণবাদী এবং অসহনীয়। মন্ত্রীর কথা কোনোভাবেই মালদ্বীপের জনগণের মতামতকে প্রতিফলিত করে না। আমরা ভারতের উপর কতটা নির্ভরশীল তা তারাও ভাল করে জানে এবং যখনই আমাদের প্রয়োজন, ভারত সর্বদাই প্রথম সাড়া দিয়েছে। ইভা আবদুল্লাহ বলেছেন, "আমরা অর্থনৈতিক সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল এবং মালদ্বীপের জনগণ এর জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ …" ।