তোলাবাজি-কাণ্ডে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন পুলিশের কাছে যাননি? মুম্বাইয়ের প্রাক্তন সিপি পরমবীর সিংকে বুধবার এই প্রশ্ন করল বম্বে হাইকোর্ট। যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ কোন দুর্নীতিতে মদত দিয়ে থাকেন তাহলে কেন পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি? এভাবেই আইপিএস পরমবীর সিংকে কটাক্ষ করেছে বম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং জিএস কুলকার্নির ডিভিশ্ন বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে এফআইআর ছাড়া এই মামলায় হস্তক্ষেপ করবে না আদালত। এদিকে, অঘটনের জেরে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন অনিল দেশমুখ। রবিবার দলীয় মুখপাত্র সামনায় এই কটাক্ষ করলেন শিব সেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। সম্প্রতি তোলাবাজি-কাণ্ডে উত্তাল হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এই ঘটনায় মুম্বাইয়ের প্রাক্তন সিপি নাম জড়িয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের। সেই প্রসঙ্গে সামনার সম্পাদকীয়তে কলম ধরেন সঞ্জয় রাউত। আর তাতেই অনিল দেশমুখের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি।
তিনি লেখেন, ‘এনসিপির দুই প্রবীণ বিধায়ক জয়ন্ত পাতিল আর দিলীপ পাতিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাই বাধ্য হয়ে অনিল দেশমুখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছেন।‘ যদিও তাঁর এই মন্তব্যের জেরে শরিকি বিবাদ বাঁধতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে রাউত পরে ট্যুইট করে জানান, ‘বুরা না মানো আজ হোলি হে।‘
যদিও এদিন সামনার সম্পাদকীয়তে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল রাউতের কলমে। তাঁর প্রশ্ন, ‘মুম্বাই পুলিশের একজন পুলিশ ইনস্পেক্টর ওয়াজে। সে এত ক্ষমতা কী করে পেল? একজন তোলাবাজির সিন্ডিকেট চালাচ্ছে সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন না কেন? কার ঘনিষ্ঠ ছিলেন শচীন ওয়াজে? এসব প্রকাশ্যে আসা উচিত।‘
মন্ত্রীর কাজ কথা কম বলা। প্রায় ক্যামেরার সামনে এনে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া একটা মন্ত্রীর কাজ নয়। এভাবেও অনিল দেশমুখকে কটাক্ষ করেছেন সঞ্জয় রাউত। তাঁর অভিযোগ, ‘অনিল দেশমুখ অযথা কয়েকজন পুলিশকর্তাকে ভুল পথে চালিত করেছেন। সন্দেহভাজন আইপিএস বৃত্ত দিয়ে কখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চলতে পারে না।‘
এদিকে, আম্বানি বোমাতঙ্ক কাণ্ডে ধৃত পুলিশ আধিকারিক শচীন ওয়াজেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে পাঠাল আদালত। শচীনের কাছ থেকে ৬২টি হিসাব বহির্ভূত বুলেট পাওয়া গিয়েছে বলে বিশেষ আদালতে জানিয়েছে এনআইএ। আলাদাভাবে ৩০টি বুলেট পুলিশ অফিসার হিসাবে বিভাগের তরফে পেয়েছিলেন তিনি। তার মধ্যে ২৫টি পাওয়া গেলেও পাঁচটি বুলেটের কোনও হদিশ নেই।
অন্যদিকে, ওয়াজে আদালতে জানিয়েছেন, আমাকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। একটি মামলার তদন্তে নেমেছিলাম মাত্র দেড় দিনের জন্য। তার মধ্যে যতটুকু পেরেছি করেছি। শুধু আমি নই, ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রত্যেক অফিসার তাঁদের সেরাটা দিয়েছেন। কিন্তু আচমকা সব বদলে গেল, ১৩ মার্চ আমি নিজে থেকে এনআইএ-র কাছে গেলাম, আর আমাকেই গ্রেফতার করা হল।
প্রসঙ্গত, অ্যান্টিলা গাড়ি বোমা-কাণ্ডে ধৃত পুলিশ আধিকারিক শচীন ভাজের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলা রুজু দিয়েছে এনআইএ। মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি রাখার ঘটনায় মুল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এই আধিকারিক। তদন্ত চলাকালীন সাসপেনশনে রয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহে বিশেষ এনআইএ আদালতে তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, সহযোগিতা করছেন না ভাজে। প্রতিবার জেরার সময় তাঁর আইনজীবীর উপস্থিতি চেয়ে সুর চড়াচ্ছেন তিনি। এদিকে, মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কর্তা পরমবীর সিংহ। নিজের অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালত তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগে বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করতে।