বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন স্বামীরা। স্ত্রীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে যাবতীয় দায়িত্ব নিজেদের চওড়া কাঁধে নিয়ে সমাজ সংসার সামলান স্বামীরা। কিন্তু অনেক স্বামীই তো আছেন, যাঁরা তাঁদের স্ত্রীর দক্ষ নিপুণ দুই হাতের কেরামতির উপরই নির্ভরশীল। তেমনই এক স্বয়ংসিদ্ধার সঙ্গে বুধবার দেশবাসীর পরিচয় ঘটল। পরনে সালোয়ার কামিজ, চোখে চশমা পরিহিত ওই ভারতীয় নারীর পতিসেবা দেখে তাজ্জব বনে গেছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে সংসার চালান ওই মহিলা। স্বামীর প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু কোথাও মেলেনি প্রতিবন্ধী শংসাপত্র। তবুও হাল ছাড়েননি, প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের জন্য বুধবার তাই স্বামীকে নিয়ে ফের বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিপাকে পড়েন ওই মহিলা। হুইল চেয়ারই তো নেই! স্বামীকে নিয়ে যাবেন কীভাবে? খানিকটা রুপোলি পর্দার বাহুবলীর কায়দায় প্রতিবন্ধী স্বামীকে পিঠে নিয়ে পথ চললেন ওই নারী। উত্তরপ্রদেশের মথুরার যে ছবি চোখে পড়তেই নজর কেড়েছে সবার।
স্বামীকে পিঠে নিয়ে ওই মহিলার গন্তব্যস্থল ছিল চিফ মেডিক্যাল অফিসারের অফিস। সেখানেই স্বামীর জন্য প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র নিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল না কোনও হুইল চেয়ার। তাই বাধ্য হয়েই স্ত্রীর পিঠে চড়তে হল স্বামীকে। যে ঘটনার হাত ধরে আবারও উঠে এল অমানবিক ছবি। শুধু তাই নয়, একাধিক সরকারি দফতরে গিয়েও প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র মেলেনিও বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। যদিও এদিন ওই মহিলার স্বামীকে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দিয়েছেন মথুরার চিফ মেডিক্যাল অফিসার।
সমাজের মুখ কি এখনও মানবিক হল না? মথুরার এই ঘটনা যেন এ প্রশ্নই উসকে দিয়েছে। বুধবারের এ ঘটনা প্রথম নয়, গত কয়েকবছরে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অমানবিক ছবির সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। ওড়িশায় শববাহী শকটের জন্য টাকা দিতে না পারায় মৃত ছেলেকে কোলে করে নিয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটেছেন বাবা। শুধু এ ঘটনাই নয়, নবীন পট্টনায়েকের রাজ্যে আরও এমন অমানবিক ছবি দেখা গেছে। মৃত স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে ১০ কিমি পথ হেঁটেছেন স্বামী। পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন সময়ে ক্যামেরাবন্দি হয়েছে অমানবিক ছবি। অসুস্থ ব্যক্তিকে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেও না দেখার ভান করেছেন বহু মানুষ, কিংবা ট্রেনের ধাক্কায় জখম ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলেও তাঁকে উদ্ধারে ঢিলেমি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ মৃত ব্যক্তি পড়ে থাকারও নজির রয়েছে এ রাজ্যে।