ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছুঁই ছুঁই। আহত ৯০০-র ঘরে। এখনও উদ্ধারকাজ পুরো হয়নি। ধ্বংসস্তুপ আরও সরানোর পর কী বিভৎস ছবি অপেক্ষা করছে তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে। শনিবার সকাল থেকেই দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। গিয়েছিলেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে যান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতা রেলমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েই বর্তমানে রেলের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেন তাঁর রেলমন্ত্রীত্বের সময় অনুমোদিত অ্যান্টি কোয়েলিশন মেশিন ট্রেনে লাগানো হল না তা নিয়ে প্রশ্নবাণ ছোড়েন। এসবের মধ্যেই এ দিন হাওড়ায় দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী বৈষ্ণবের পদত্যাগ দাবি করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী করবেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব? মোদী সরকার বিষয়টিকে আমল দিতেই রাজি নয়। তবে, রেল দুর্ঘটনার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের নজির বিগত ৭৫ বছরে রয়েছে। শুরু সেই জওহরলাল নেহেরুর আমলের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী থেকে। আর শেষ হালফিলের মোদী জমানার সুরেশ প্রভুকে দিয়ে। ইস্তফার তালিকায় নাম রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তবে ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহতম ওড়িশার করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার দায় নিয়ে বৈষ্ণব পদত্যাগ করলে তিনি পদত্যাগী রেলমন্ত্রীদের তালিকায় থকবেন নবতম সংযোজন হিসাবে।
রেল দুর্ঘটনার দায় নিয়ে অতীতে কোন কোন রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন?
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী (১৯৫৬)
১৯৫৬ সালে দু'বার রেল দুর্ঘটনা হয়েছিল। সেবছর অগাস্টে অন্ধ্রপ্রদেশে রেল দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। রেলমন্ত্রী লালবাহাদুর সেই দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে। কিন্তু তা গ্রহণ করেননি নেহেরু।
এরপর ১৯৫৬ সালেই নভেম্বর মাসে তামিলনাড়ুর আরিয়ালুর ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হয়েছিলেন ১৪৪ জন। সেই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু তা গ্রহণ না করলেও পরে শাস্ত্রীর অনুরোধে তাতে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। শাস্ত্রীর পদক্ষেপের প্রশংসা করেছিলেন শাস্ত্রীর। ফলে জনপ্রিয়তা বাড়ে লাল বাহাদুরের।
নীতীশ কুমার (১৯৯৯)
১৯৯৯ সালের অগাস্টে অসমে গাইসাল দুর্ঘটনা দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ও ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। নিহত হয়েছিলেন ২৯০ জন যাত্রী। তৎকালীন রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার ওই দুর্ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (২০০০)
২০০০ সালে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছর দু’টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। প্রাণ যায় ৪৩ জনের। কিন্তু, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী মমতার পদত্যাগ গ্রহণ করেননি।
সুরেশ প্রভু (২০১৭)
ওই বছর দু'টি রেল দুর্ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে বড় ছিল কানপুরের কাছে পটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেসের ১৪ টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা। মৃত্যু হয়েছিল ১৫০ জনের। তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু রেল দুর্ঘটনার পরে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। প্রভুকে বিষয়টি সময় নিয়ে ভেবে দেখার কথা বলেছিলেন। তবে প্রভু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। ফলে পরবর্তী সময়ে সুরেশ প্রভুকে রেলমন্ত্রক থেকে সরিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের দায়িত্বে আনা হয়। রেল মন্ত্রী করা হয়েছিল পীযূষ গোয়েলকে।
এই পথেই কী হাঁটতে দেখা যাবে বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে?