উন্নাওয়ের ধর্ষিতা এবং তাঁর পরিবারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যে সাধারণ মানুষকে কতটা প্রভাবিত করেছে তার প্রমাণ পেলেন উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকির এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার। বুধবার এক স্কুলছাত্রী তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখল, সে অভিযোগ করলে তারও অবস্থা ওই ধর্ষিতার মতোই হবে কি না। উল্লেখ্য, রবিবার এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন উন্নাওয়ের ওই তরুণী এবং তাঁর উকিল। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁর দুই আত্মীয়া।
বারাবাঁকির আনন্দ ভবন স্কুলে মেয়েদের মধ্যে সুরক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে 'বালিকা সুরক্ষা জাগরুকতা অভিযান' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আর এস গৌতম। তিনি বলছিলেন, মেয়েদের সজাগ থাকা উচিত, এবং তাদের সঙ্গে কোনোরকম অন্যায় হচ্ছে বুঝলেই ততক্ষণাৎ টোল ফ্রি হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করে জানানো উচিত।
এই সময়ই ওই ছাত্রী উঠে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ কটাক্ষের সুরেই জানতে চায়, "যার বিরুদ্ধে নালিশ করছি সে যদি জানতে পারে, এবং আমাদের সঙ্গেও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কী হবে?"
আরও পড়ুন: উন্নাওকাণ্ড: ভারী বৃষ্টিতে ভুল দিক থেকে আসছিল ট্রাক, দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের
এতেই থামে নি ওই কিশোরী। তার আরও প্রশ্ন, "প্রতিবাদ করলে কি আমি বিচার পাব? কারণ উন্নাওয়ের এক বিধায়ক একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করেন, এবং আইনি লড়াই লড়তে গিয়ে তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে।"
প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে যান ওই আধিকারিক, এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন, "টোল ফ্রি নম্বরে যিনিই অভিযোগ করুন, তাঁকে সাহায্য করা হবে।"
রবিবার দুপুরে উন্নাওয়ের তরুণী, তাঁর পরিবারের কিছু সদস্য, এবং তাঁর উকিল যে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, রায় বরেলি হাইওয়ের ওপর সেটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে উল্টোদিক থেকে তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি ট্রাকের।
এই দুর্ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই, এবং ১০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার। এমনিতেও বর্তমানে জেলেই রয়েছেন উন্নাওয়ের তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত সেঙ্গার। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখন নাবালিকা ছিলেন ওই তরুণী।
রবিবারের দুর্ঘটনার নেপথ্যে কোনো চক্রান্ত রয়েছে, তরুণীর পরিবারের এই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সেঙ্গার এবং আরও নয়জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।