স্থল হামলার মাধ্যমে ইজরায়েল গাজা শহর দখলের চেষ্টা, হামাস জঙ্গিদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযানের মাঝে ইরানের বিরাট হুমকি সামনে এসেছে।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান শনিবার ইজরায়েলকে গাজায় হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন হিজবুল্লাহ যুদ্ধে যোগ দিলে যুদ্ধ পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে ইজরায়েল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। হিজবুল্লাহর প্রায় দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। আবদুল্লাহিয়ান বৈরুতে সাংবাদিকদের বলেছেন যে হিজবুল্লাহ যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইজরায়েলের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় তাদের হামলা বন্ধ করা। ইজরায়েল হিজবুল্লাহকে সবচেয়ে গুরুতর আসন্ন হুমকি বলেই মনে করে।
হিজবুল্লাহর প্রায় দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে । এর মধ্যে ইজরায়েলের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে তাদের হেফাজতে। হাজার হাজার যোদ্ধার এই দলটির বিভিন্ন ধরনের সামরিক ড্রোনও রয়েছে। গত শনিবার হামাসের হামলার পর লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার, হিজবুল্লাহ বলেছে যে তাদের যোদ্ধারা সীমান্তে ইজরায়েলের চারটি স্থানে বেশ কয়েকটি রকেট নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে যে তারা স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রের মাধ্যমে গাজায় 'মিলিত' আক্রমণের জন্য সম্পুর্ণ প্রস্তুত। সেনাবাহিনী গাজা সীমান্তে তার বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্যকে জড়ো করেছে এবং চূড়ান্ত কমান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
আইডিএফ শীর্ষ কর্মকর্তা, জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, "আমাদের যুদ্ধ অভিযানের তীব্রতা বাড়াতে সৈন্যরা প্রস্তুত রয়েছে। একটি সামরিক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে তার বাহিনী সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে, যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য "গুরুত্বপূর্ণ স্থল অভিযানের উপর জোর দিয়ে" অপারেশনাল প্রস্তুতি বাড়িয়েছে।
গাজায় হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বকে নির্মূল করার জন্য ইজরায়েলের স্থল হামলার পরিকল্পনা করেছে। এক সপ্তাহ আগে হামাস জঙ্গিরা ইজরায়েলের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। যার পালটা জবাব দিয়েছে ইজরায়েলও।
ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, সেনাবাহিনীর লক্ষ্য হবে "হামাসকে ধ্বংস করা এবং তাদের হত্যার পর তাদের নেতাদের নির্মূল করা। উদ্দেশ্য এই সংগঠনকে <হামাস> গাজাকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে আর শাসন করতে না দেওয়া। গাজা হামাসের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত।
ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "আমাদের অভিযানের লক্ষ্য হল হামাস এবং এর সামরিক ক্ষমতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যাতে হামাস আর কখনও ইজরায়েলি সাধারণ নাগরিকদের হত্যা বা অপহরণ বা হুমকি দেওয়ার সাহসও না পায়"।
ইজরায়েলি সেনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্থল হামলার সময় ঘোষণা করেনি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে স্থল হামলা শুরু করতে চলেছে ইজরায়েলি সেনা। সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে এই সপ্তাহান্তে গাজায় প্রবেশের পরিকল্পনা করেছিল। কিছুটা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাতে খানিক বিলম্ব ঘটে।
ইজয়েলের সেনাবাহিনী দক্ষিণ ইজরায়েলের গাজা সীমান্তে ৩০,০০০ সেনা মোতায়েন করেছে। আইডিএফের মতে, তারা একটি "গুরুত্বপূর্ণ" স্থল অভিযানের পরিকল্পনা করছে, যেখানে কমপক্ষে ১০ হাজার সেনা গাজা অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল অভিযানে একযোগে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইজরায়েল।
হামাসও শহরের উত্তরাঞ্চলে তাদের যোদ্ধাদের জড়ো করেছে বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০৮ সালে গাজা আক্রমণের পর থেকে ভূমি দখলের জন্য এই হামলাই হবে প্রথম স্থল পদক্ষেপ। এছাড়াও, ২০০৬ সালে লেবানন আক্রমণ করার পর থেকে এটি ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় স্থল অভিযান।