বছর দু'য়েক আগের কথা। উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বীর আর পাঁচটা গৃহবধূর মতই সাদামাটা জীবন ছিল যশোদা লোধীর। স্বামী দিন মজুর। ঘরকন্যার কাজ করেই জীবন চলছিল তাঁর। কিন্তু ২০২১ সালের দীপাবলির দিন থেকেই ক্রমেই বদলে যায় যশোদার জীবন। স্মার্টফোনের মাধ্যমে আলোর উৎসবের রং লাগে এই বছর ২৮-য়ের বধূর জীবনেও।
'ইংলিশ উইথ দেহাতি ম্যাডাম'
গ্রাম্য বধূ যশোদার একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, নাম 'ইংলিশ উইথ দেহাতি ম্যাডাম'। ১১ মাস আগে এই চ্যানেলটি খুলেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই চ্যানেলের ৩ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার। ঝুলিতে রয়েছে সিলভার বটম। অতি কম সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে 'ইংলিশ উইথ দেহাতি ম্যাডাম' চ্যানেল।
যশোদা একটি হিন্দি-মাধ্যম স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং 'দেহাতি' ট্যাগের জন্য গর্বিত। তিনি সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে শিখেছেন, তিনি বলেন, 'প্রতিদিন অনুশীলন করে, বই পড়ে এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইউটিউবে অন্যদের ইংরেজীতে কথা বলার মাধ্যমে চ্যানেলটি দাঁড় করিয়েছেন। আমি ইয়ারফোন ব্যবহার করতাম এবং ঘরের কাজ করার সময় আমার ফোন আলমিরাতে রাখতাম। অন্যদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা আমার জন্য সাফল্যের চাবিকাঠি।'
কঠোর অনুশীলন
প্রতিদিনের সকাল ৩টেয় ঘুম থেকে উঠে বই পড়া,এক ঘন্টা ইংরেজি কথা বলার অনুশীলন এবং তারপরে তার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিওগুলি শুটিং এবং সম্পাদনা করেন যশোদা। সে তাঁর গৃহস্থালির কাজকর্মের সঙ্গেই এই সব চালান। গৃহবধূর কথায়, 'আমি নিজে থেকে শুট করি, সম্পাদনা করি এবং আপলোড করি এবং আমি ইউটিউব ভিডিও দেখে এই সমস্ত শিখেছি।'
বর্তমানে যশোদা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অর্জন করেন ইউটিউব থেকে। যা লকডাউনের পরে টালমাটাল সাংসারিক অর্থনীতিতে আশার আলো। এখন যশোদার স্বামী রাধে লোধী পথদুর্ঘটনায় জখম। উপার্জনে অক্ষম। ফলে চ্যানেল থেকে উপার্জিত অর্থ গৃহবধূর জীবনে প্রভুত কাজ করেছে। যশোদার কথায়, 'স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, সেটাই পারছি, এটা ভাল লাগছে।'
কীভাবে ইউটিউবার হলেন যশোদা?
গৃহবধূর কথায়, 'আমি সন্দীপ মহেশ্বরীর একটি ভিডিও দেখেছিলাম, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে কেউ ইউটিউবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে এবং শালীনভাবে উপার্জনও করতে পারে। সেখান থেকে, আমি অন্যান্য ভিডিও দেখতে শুরু করি এবং ইউটিউবের খুঁটিনাটি বোঝার চেষ্টা করি। এভাবেই ক্রমে ইউটিউবার হয়ে যাই।' নিজের কাজের মূল্যায়ণের জন্য আমি দর্শকদের থেকে সবসময়ই ফিডব্যাক চেয়েছি। সেটাই আমাকে এদিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
কেন ইংরেজী নিয়ে চ্যানেল খুললেন?
চ্যানেলের ডেসক্রিপশনে যশোদা লোধী বলেছেন যে, তার বিষয়বস্তু গ্রামীণ পটভূমির ছাত্র এবং অন্যদের জন্য যাঁরা সহজ উপায়ে ইংরেজি শিখতে চায়। তাঁর কথায়, '…আমাদের গ্রামের মহিলাদের এই ধরণের ক্লাসের খুব প্রয়োজন যা তাদের সহজ উপায়ে ইংরেজি শেখায়।'
২০২২ সালের ডিসেম্বরে চ্যানেল শুরু করার পর থেকে, যশোদা 'কীভাবে একজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে একটি সফল কথোপকথন করতে হয়' থেকে 'কেন আপনি ইংরেজি শিখতে চান' পর্যন্ত বিষয় সহ ৩৬৮টি ভিডিও আপলোড করেছেন। ভাইরাল হওয়া আরও অনেকের মধ্যে তার কাছে ‘যেকোনো বিষয়ে কথা বলার ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘কীভাবে ভয় কাটিয়ে উঠতে হয়’ শিরোনামের ভিডিও রয়েছে।
তার অনেক ভিডিও ১০ লাখ বার দেখা হয়েছে। যশোদার কথায়, 'আমি নিজের জন্য একটি নাম এবং খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিলাম, এবং একবার আমি দ্বিধা ভেঙ্গে এবং ব্যর্থতার ভয় কাটিয়ে উঠেছিলাম, আমি পিছনে ফিরে তাকাইনি।' চ্যানেল থেকে অর্থ উপার্জন না হলেও তিনি ভিডিও তৈরি করে যাবেন বলে দাবি করেছেন যশোদা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
'আমি আগামিতে একটি স্কুল খুলতে আগ্রহী। যেখানে সকলে পড়াশুনো করতে পারবেন। এছাড়া আর্থিক সঙ্গতি হলে একটি বৃদ্ধাশ্রমও তৈরি করার ইচ্ছা আছে।'
যশোদার পরামর্শ
'যাঁরা নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলতে আগ্রহী তাঁদের প্রতি আমার পরামর্শ, প্রথমেই সবকিছু ভাল হয়না, কিন্তু চেষ্টা ও অভ্যাসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্ঝন সম্ভব। এভাবেই সর্বদা আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যেতে পারে। ব্যর্থতা থেকে কখনওই হাল ছাড়বেন না, বরং তাদের থেকে শিখুন এবং আবার চেষ্টা করুন।'