উদ্বোধনের দুবছরও পেরোয়নি। তার মধ্যেই প্রগতি ময়দান টানেলের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ্যে। এর প্রেক্ষিপ্তে দিল্লি সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD) Larsen & Toubro (L&T) কোম্পানিকে ইতিমধ্যেই একটি নোটিশ পাঠিয়েছে এবং প্রগতি ময়দান টানেলে মেরামত কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিকে ৫০০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। উল্টোদিকে সংস্থাও ৫০০ কোটির পালটা দাবি করেছে।
৩ ফেব্রুয়ারি পাঠানো নোটিশে পিডব্লিউডি কোম্পানিকে বলেছে, টানেলের অনেক জায়গায় দেওয়াল থেকে অবিরাম জল পড়ছে। টানেল ও আন্ডারপাসের অনেক জায়গায় বড় ফাটল সামনে এসেছে। একই সঙ্গে টানেলের ভিতর ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নানা ত্রুটির কারণে টানেলে জল জমার সমস্যা দেখা দিয়েছে। PWD ১৫ দিনের মধ্যে কোম্পানির কাছে জবাব চেয়েছে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ত্রুটি মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রগতি ময়দান ইন্টিগ্রেটেড ট্রানজিট করিডোর প্রকল্পের অধীনে ১৯ জুন, ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী এই ১.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল এবং পাঁচটি আন্ডারপাস উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর বর্ষার সময় জল জমার কারণে টানেলটি বেশ কয়েকবার বন্ধ করে দিতে হয়। এই টানেলটি ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছিল।
PWD-এর তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, প্রকল্পে ত্রুটিগুলি দেখা দিতে শুরু করেছে। কেবল প্রযুক্তিগত নয়, ডিজাইনেও ত্রুটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা আন্ডারপাসের অনেক জায়গায় জল জমার সমস্যা। বর্ষার সময় জল জমার কারণে সাধারণ মানুষের জন্য টানেলটিকে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে আগের চেয়ে বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
পিডব্লিউডি বলেছে, এই প্রকল্পের নকশা এবং বাস্তবায়ন L&T-এর হাতে ছিল এবং কোনও সরকারী প্রতিষ্ঠানের এতে কোনও ভূমিকা নেই। জনগণের সমস্যা এবং তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেও কোম্পানি সময়মত ব্যবস্থা নেয়নি। কোম্পানি সাধারণ জনগণের প্রতি তার দায়িত্বের প্রতি অবহেলাই করেনি বরং চুক্তির শর্তাবলীও লঙ্ঘন করেছে।
এই নোটিশে পিডব্লিউডি কোম্পানিকে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। পাশাপাশি ৫০০ কোটি টাকার জরিমানা ও চিহ্নিত স্থানে মেরামতের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টানেল নির্মাণের দায়িত্ব এলঅ্যান্ডটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটি ৪ বছর ৭ মাসে প্রগতি ময়দান টানেল ও আন্ডারপাস নির্মাণ করে। গত ১৮ মাসে, PWD কোম্পানির আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে জানুয়ারিতে তিনবার টানেলটি পরিদর্শন করেছে। এরপরও কোম্পানির তরফে সেই সব ত্রুটি সংশোধন করা হয়নি। এমনকি PWD এটিকে 'যাত্রীদের জন্য সম্ভাব্য হুমকি' বলে ঘোষণা করেছে।
একজন প্রবীণ PWD আধিকারিক বলেছেন, “আগে, আমরা ভেবেছিলাম জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে যে ছাদ থেকেও জল পড়ছে। কেন এই ধরণের ঘটনা ঘটছে তা খতিয়ে দেখার জন্য PWD এবং L&T-এর সিভিল ডিভিশন কাজ করছে"।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন সুড়ঙ্গের ভিতর বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ছুঁইয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। জলে কোন দুর্গন্ধ ছিল না। এটা ইঙ্গিত করে টানেলের ভিতর জমা জল পানীয় জলও হতে পারে। "কীভাবে এই সমস্যা মোকাবিলা করা যায় তার সমাধানের জন্য কাজ চলছে"।
PWD টানেলটিকে বিপজ্জনক বলে মনে করা সত্ত্বেও কেন টানেলটি এখনও জনসাধারণের জন্য খোলা রয়েছে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আধিকারিক বলেন, "চার চাকার জন্য, টানেলটি ততটা বিপজ্জনক নয়, তবে টু-হুইলার ব্যবহারকারীদের টানেল এড়িয়ে চলা উচিত। টানেল কংক্রিটের ব্লকটি বেশ কয়েকটি জায়গায় ভেঙে গেছে এবং ভিজে রয়েছে। দ্রুতগামী দুচাকার গাড়ির সামান্য ভুলে বিপজ্জনক পরিণতি হতে পারে…"।
ড্রেনেজ সমস্যা সম্পর্কে এক আধিকারিক বলেছিলেন, “করিডোর এবং কনভেনশন সেন্টারের মধ্যে ড্রেনেজ সিস্টেমের সমন্বয়ে কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে তা সংশোধন করা হবে।” এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, দিল্লি সরকার জানিয়েছেন, "প্রগতি ময়দান টানেল করিডোরের অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। "আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মঙ্গল সর্বাধিক অগ্রাধিকার, এবং টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে কোনও ধরণের ত্রুটি অগ্রহণযোগ্য,"। দিল্লি সরকারের তরফে বলা হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থাকে ৫০০ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়েছে। সেই টানা জমা না দিলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
L&T এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করে নি। জবাবে এলএন্ডটি মুখপাত্র আগে বলেন, “পিডব্লিউডি, দিল্লি, আমাদের এক সম্মানিত ক্লায়েন্ট। কোম্পানি PWD দিল্লির বিরুদ্ধেও ৫০০ কোটি টাকার পাল্টা দাবি করেছে।" এদিকে এই বিষয়ে একজন নির্মাণ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, "ডিজাইনগুলিও পরীক্ষা করা দরকার। নকশা এবং নির্মাণ সামগ্রীর অডিট করা দরকার। নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলিও শনাক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে” ।