সুপ্রিম কোর্ট গত মাসেই রায় দিয়েছে, যে কোনও বয়সের মহিলারাই প্রবেশ করতে পারবেন কেরালার শবরীমালা মন্দিরে। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে রাজ্য জুড়ে চলছে প্রতিবাদ। কেরালার আয়াপ্পা ভক্তদের বক্তব্য ছিল, ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে নাকি দেবতার কৌমার্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শনিবার ত্রিচি থেকে শবরীমালা মন্দিরে আসা এক ৫২ বছরের মহিলা ভক্তকে বয়সের প্রমাণপত্র দেখে তবেই গর্ভগৃহে ঢুকতে দিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
স্বামী এবং পুত্রের সঙ্গে মন্দিরে এসেছিলেন ওই মহিলা। মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভেবেছিলেন মহিলার বয়স ৫০ এর নীচে। আয়াপ্পার সমর্থনে স্লোগান দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন ভক্তরা। মহিলার পরনে ছিল নীল শাড়ি এবং লাথা। তাঁর পোশাক নিয়েও আপত্তি তোলেন ভক্তেরা। পরিচয়পত্রে বয়স দেখে শেষমেশ গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় মহিলাকে। ১৮ ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন মহিলার পরিবার।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই মহিলা জানিয়েছেন, মন্দিরে প্রবেশ করা নিয়ে এত জল ঘোলা হওয়ায় তিনি মর্মাহত। তিনি আরও জানিয়েছেন, মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য যা যা করণীয়, সেই সব আচার-উপাচারই তিনি নিয়ম মাফিক করেছিলেন।
আরও পড়ুন, মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিলে মন্দির বন্ধ করে দেব: শবরীমালার প্রধান পুরোহিত
প্রসঙ্গত, শুক্রবারও তিনজন মহিলাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আয়াপ্পাদের মন্দির থেকে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে মন্দির তালা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি নিয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ রায় দেয়, কেরালার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন সব বয়সের মহিলারা। ঐতিহাসিক এই রায় নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল রায়ের পর থেকেই। আয়াপ্পা ডিভোটিজ অ্যাসোসিয়েশন-এর পাশাপাশি নাইয়ার সোসাইটি এবং দিল্লির চেতনা কনশিয়েন্স অব উইমেন-এর পক্ষ থেকেও রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। তাদের মতে, শীর্ষ আদালতের রায় "অসমর্থনযোগ্য এবং বিরক্তিকর"।
এতদিন ধরে শবরীমালা মন্দিরে প্রথানুযায়ী ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। এর বিরুদ্ধে কেরালা হাইকোর্টে যে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, কেবলমাত্র তন্ত্রী (পুরোহিত)-ই এই প্রথার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। এর বিরুদ্ধে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই প্রথা প্রকৃতিগত ভাবেই বৈষম্যমূলক এবং মহিলাদের প্রার্থনার স্থান বাছাইয়ের অধিকারে হস্তক্ষেপকারী।