শবরীমালা মন্দিরে যেতে চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি, দাবি শিক্ষিকার

রেশমা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন যে ৪১ দিনের 'ব্রত' করে তিনি আয়াপ্পা দর্শণে যাবেন। শীর্ষ আদালত যেদিন শবরীমালা ইস্যুতে ঐতিহাসিক রায় দেয় তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ অক্টোবর নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্য আনেন রেশমা।

রেশমা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন যে ৪১ দিনের 'ব্রত' করে তিনি আয়াপ্পা দর্শণে যাবেন। শীর্ষ আদালত যেদিন শবরীমালা ইস্যুতে ঐতিহাসিক রায় দেয় তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ অক্টোবর নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্য আনেন রেশমা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Women chant hymns during a protest called by various Hindu organisations against the lifting of ban by Supreme Court that allowed entry of women of menstruating age to the Sabarimala temple, on the outskirts of Kochi

শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে উত্তাল কেরালা।

শবরীমালা মন্দিরে তীর্থ করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করায় ফেসবুকে হুমকির মুখে কেরালার স্কুল শিক্ষিকা। ওই শিক্ষিকা যদি সত্যিই শবরীমালা মন্দিরে পা রাখেন, তাহলে জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারবেন না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

Advertisment

কেরালার শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শতাব্দী প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। ঋতু চলাকালীন নারী শরীর অপবিত্র থাকে এমন দাবিতেই এতদিন ধরে এই প্রথা চলে আসছিল। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট সেই প্রথাকে খারিজ করে দিয়ে লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে ৭ অক্টোবর দেশের শীর্ষ আদালতের সেই রায় কিছুতেই বাস্তবায়িত হতে দিতে চায় না সে রাজ্যের 'ভক্তবৃন্দ'। এই নিয়ে আয়াপ্পা ভক্তরা পথে নেমে রীতিমতো বিক্ষোভও দেখিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, রাজ্যের পিনারাই বিজয়ন সরকার সুপ্রিম নির্দেশকে কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। আর এরমধ্যেই রেশমা নিশান্থ নামের বছর বত্রিশের এক স্কুল শিক্ষিকা শবরীমালা মন্দিরে যাবেন বলে ঘোষণা করেন। আর তাকে ঘিরেই যত বিপত্তি।

রেশমা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন যে ৪১ দিনের 'ব্রত' করে তিনি আয়াপ্পা দর্শণে যাবেন। শীর্ষ আদালত যেদিন শবরীমালা ইস্যুতে ঐতিহাসিক রায় দেয় তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ অক্টোবর নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্য আনেন রেশমা। রেশমা ফেসবুকে আরও লেখেন, "আজ এক ভক্ত যদি এই কাজটা (শবরীমালা দর্শন) করতে পারে, তাহলে আগামীকাল লক্ষ লক্ষ ভক্তকে তা নৈতিক সাহস যোগাবে। যেহেতু ঋতুস্রাব নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হবে বলে মনে হচ্ছে তাই আমি বলতে চাই, ঋতু চলাকালীন যে রক্ত শরীর থেকে নির্গত হয় তা সাধারণ রক্তের মতোই। মূত্র বা বর্জ্য পদার্থের মতোই তা মানব শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। আর তাই আমি মনে করি ৪১ দিনের এই ব্রত আমি পবিত্রতার সঙ্গেই পূর্ণ করতে পারব"। এই পোস্টটি করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তাঁকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা শুরু হয় বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকম-কে জানান রেশমা। এই শিক্ষিকা প্রথমে নিজে এইসব গালিগালাচ ও হুমকি দেওয়া মেসেজগুলি দেখেননি। তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু যাঁরা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে সক্রিয়, তাঁরাই রেশমার গোচরে আনে বিষয়টি। এরপর রেশমাও সেসব কমেন্ট দেখেন এবং কান্নাপুরম থানায় সাইবার হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন।

রেশমা, তাঁর স্বামী নিশান্থ বাবু এবং তাঁদের শিশুকন্যা একসঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি ধর্মস্থান শবরীমালা মন্দিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। পেশায় একটি সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মী নিশান্থ বাবু জানাচ্ছেন, তিনি কোনও ব্রত নিয়ে দেব দর্শণে যাচ্ছেন না। বরং, স্ত্রীর সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তিনি সঙ্গে যাবেন। এই মুহূর্তে শবরীমালা ইস্যুতে রাজ্যের যা পরিস্থিতি তাতে হিংসার ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কা করেই স্ত্রীর সঙ্গী হবেন বলে ঠিক করেছেন নিশান্থ বাবু। তবে তাঁর মতে, রাজ্যের এই অবস্থার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা রয়েছে। বিজেপি এ ধরণের রাজনীতির সঙ্গে বহু দিন রয়েছে বলে দাবি করে কংগ্রেসর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গণতান্ত্রিক দলগুলি কীভাবে এমন একটা পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকে, সে বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। নিশান্থ বাবুর সাফ কথা, "আমি রেশমাকে যেতে বলিনি। আর বাধাও দেব না। ভক্তি থেকে সে নিজেই যাবে বলে ঠিক করেছে। আমাদের পরিবারের সকলে তাঁর পাশে রয়েছে"।

Advertisment

Read this story in English

supreme court