'তিতলি'। মিষ্টি নাম হলে কী হবে। শেষ দিন তিনেকে কী ভয়ানক রূপটাই না দেখালো। ওদিকে আবার মায়েদের হিড়িক পড়েছে ঝড়ের নামে নাম দেবেন সদ্যোজাতের। কী অদ্ভুত সমাপতন। বাংলায় হিসেব মতো দেবীপক্ষ পড়ে গেছে। এই সময়ে ঘরে কন্যা সন্তান এলে মা দুর্গার নামে নাম রাখার ঝোঁক নতুন কিছু নয়। কিন্তু ঝড়ের নামে নাম? ওড়িশার গঞ্জাম, জগতসিংপুর, নয়াগঢ়-এ 'সাইক্লোন তিতলি' আছড়ে পড়ার আগে পরে যে সব মায়ের কোলে ফুটফুটে মেয়ে জন্মেছে, তাদের অধিকাংশের নাম রাখা হয়েছে তিতলি।
আরও পড়ুন: Cyclone Titli: শহরের আকাশ থেকে সরছে কালো মেঘ
ছত্রপুরের মহকুমা হাসপাতালে বছর কুড়ির আল্লেম্মার যমজ সন্তান জন্মেছে বৃহস্পতিবার ভোরবেলায়। তিতলি তখন আছড়ে পড়ছে ওড়িশার উপকূলে। আল্লেম্মা ওঁর দুই সদ্যোজাতর নাম রেখেছেন তিতলি এবং পলাশা। ২৯ বছরের বিমলার কোল আলো করে ওই একই দিনে জন্মেছে বিমলার তৃতীয় সন্তান। বিমলাও ঝড়ের নামেই নাম রেখেছেন মেয়ের। আসকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত ন'টি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মোহন বারিক জানিয়েছেন, "বুধবার সকালের পর থেকেই যারা জন্মেছে, আমরা ঠিক করেছিলাম তাদের নাম রাখব তিতলি।" ওড়িশায় অবশ্য এমনটা প্রথম নয়। ১৯৯৯ সালের বিধ্বংসী সাইক্লোনের সময় রাজ্য জুড়ে বহু শিশুর নাম রাখা হয়েছিল সেই সাইক্লোনের নামে।
এর অবশ্য অন্য দিকও আছে। যে দেশে কন্যা ভ্রূণ কে মেরে ফেলা হয়, পণ না দেওয়ায় বধুহত্যা হয়, আকাশে উড়তে চাইলে ডানা ছেটে দেওয়া হয় যখন তখন, সে দেশে তো এটাই প্রতিবাদ। লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে হলে শান্তশিষ্ট হতে হয়, সহিষ্ণুতা শিখে নিতে হয় একরত্তি বয়সেই। সেই সমাজের দিকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এক বার। সাইক্লোনের নামে নাম রাখা হচ্ছে মেয়ের। এ দেশের হাজার হাজার 'তিতলি'রা যেন ঝড় তুলতে পারে সমাজে। দাপিয়ে বেড়াতে পারে আশপাশ। আবার যেন 'তিতলি' (প্রজাপতি)-র মতো উড়ে উড়ে বেড়াতে পারে, রঙ ছড়াতে পারে ওদের চারপাশে।