প্রতি বছর ২৯ শে সেপ্টেম্বর পালিত হয় 'বিশ্ব হার্ট দিবস'! মূলত জনসাধারণের মধ্যে 'হৃদরোগের বিরুদ্ধে' সচেতনতা তৈরি করা আজকের এই বিশেষ দিনটির উদ্দেশ্য। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যান। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তরফে বিশ্ব হার্ট দিবস উদযাপন শুরু করা হয়েছে যাতে হৃদরোগের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা যায়। ২০০০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হয়। এটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযান। যার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব কিভাবে হৃদরোগ (সিভিডি) এড়ানো যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দিনটি কখন এবং কীভাবে শুরু হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন এই দিনে জন সাধারণের মধ্যে হার্ট সম্পর্কে বিভিন্ন রোগ সহ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদি নিয়ে সচেতনতা প্রচার করে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের ইতিহাস
জন সাধারণের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে, ১৯৯৯ সালে প্রথম ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মিলিত প্রচেষ্টায় এই দিনটিকে সারা বিশ্ব জুড়ে হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হবে বলে ঠিক হয়। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (১৯৯৭-২০১১) অ্যান্টনি বয়েঁস দে লুনা (Antoni Bayés de Luna) এই বিশেষ দিনটিকে উদযাপনের কথা বলেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং প্রথম ২০০০ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর মহাসমারোহে এই দিনটি পালন করা হয়।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২২ থিম
প্রতি বছর বিশ্ব হার্ট দিবস একটি থিমের অধীনে পালিত হয়। এই বছর 2022 সালে বিশ্ব হার্ট দিবসের থিম ‘ইউজ হার্ট টু কানেক্ট’। বিশ্ব হার্ট দিবসের সূচনার পর থেকে প্রতি বছর, এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী হার্টের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচারের জন্য একটি নির্দিষ্ট থিমের ওপর ভিত্তি করে পালন করা হয়।
বিশ্ব হার্ট দিবসের গুরুত্ব
সারা বিশ্বব্যাপী গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, আজকাল তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যায় ভুগছেন। এমন অবস্থায় বিশ্ব হার্টদিবসের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে তাদের হার্ট সম্পর্কে সচেতন করা। বিশ্ব হার্ট দিবস গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার হার্টকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। আপনার হৃদয়কে খুশি ও সুস্থ রাখতে আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করা এবং নিয়মিত সঠিক খাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন৷ এই দিনটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মানুষকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত করে৷ এই দিনটি স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে৷
হৃদরোগের প্রধান কারণ হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি। বর্তমান সময়ে, মানুষ খুব কম শারীরিক পরিশ্রম করেন। ক্রমবর্ধমান স্থূলতাও একটি বড় সমস্যা হিসেবে উঠে আসছে। লাইফস্টাইল পরিবর্তন এর জন্য দায়ী বলেই মনে করছেন চিকিৎসক সমাজ। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়, তাই হার্টকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরি। আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এবং সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি সহজেই এড়াতে পারেন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
কোভিডের পরে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেড়েছে
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেলিওয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। খিঁচুনি এবং হার্ট ফেলিওয়ের ঘটনা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিডের কারণে যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলেন বা যারা ভেন্টিলেটরে ছিলেন তাদের মধ্যে এই ধরণের ঘটনার প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন
চিকিৎসকরা বলেছেন, যাদের কোভিড মারাত্মক আকার নিয়েছিল তাদের আগে ভাগেই সাবধান হওয়া দরকার। “কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের হার্টের সমস্যা আগে থেকে জানান দেওয়া কঠিন। কোভিড সংক্রমণের পরে হেভি ওয়ার্কআউট না পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। দ্রুত হাঁটা বা হালকা জগিংয়ের মত হালকা ব্যায়ামই ভাল। ওয়েট লিফটিং বা ট্রেডমিলে বেশিক্ষণ হাঁটা আপনার হৃদয়কে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে"।