সাংবাদিকদের তাঁদের কাজ সঠিকভাবে করতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় রইল ভারতের নাম। মিডিয়া ওয়াচডগ ‘রিপোর্টার স্যানস ফ্রন্টিয়ারস’ (যা ‘রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার’ বলেও পরিচিত) বা আরএসএফ এর ২০২১ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী ভারত রয়েছে ১৪২ তম স্থানে। ব্যাখা হিসেবে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে তুলনামূলকভাবে যেটুকু স্বাধীন পরিবেশ ছিল, সেই পরিসরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে।
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্স অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১৩৩ তম। ২০১৭ সালে তিনধাপ নেমে স্থান হয় ১৩৬। ২০১৮ সালে আরও দু’ধাপ নেমে হয় ১৩৮। এবার সেই সংখ্যা আরও কমল। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯২-২০১৬ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে দেশে ৭০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে খুন হন ন’জন। ২০১৭ সালেই খুন হয়েছেন ত্রিপুরার সুদীপ দত্ত ভৌমিক ও শান্তনু ভৌমিক, উত্তর প্রদেশের নবীন গুপ্তা ও কর্ণাটকের গৌরী লঙ্কেশ। ২০১৮ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালে সাংবাদিক ও সম্পাদক গৌরী লঙ্কেশেকে গুলি করে খুন করে হিন্দুত্ববাদীরা। দলিতদের পক্ষে দাঁড়ানো, উগ্র হিন্দুত্বের সমালোচনা, নারী স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করার অপরাধে বহুদিন ধরেই হিন্দুত্ববাদীরা তাঁর উপর খড়্গহস্ত ছিল। এই ঘটনার পর সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
রিপোর্টে এও বলা হয় কোনও সাংবাদিক সমালোচনা করলে বিজেপি সমর্থকেরাই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। এমনকী তাঁকে "রাষ্ট্রবিরোধী" বা "দেশবিরোধী" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এও বলা হয়, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংবাদমাধ্যমকে নিজের হাতে শক্ত করে বেঁধে রাখতে চাইছেন। বিজেপি কিংবা গো-রক্ষা বাহিনীর মতো সংগঠনগুলির সমালোচনা করলেই তারা ”প্রায়শই অনলাইনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে হেট স্পিচ ব্যাপক ভাবে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে”, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
আরএসএফ রিপোর্টে বলা হয়েছে, “২০১৪ সালে, যেদিন থেকে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সেদিন থেকে ‘হিন্দু মৌলবাদীরা’ সাংবাদিকদের প্রতি অত্যন্ত হিংস্র ভাষা ব্যবহার করছে। শাসক দলকে বিচলিত করতে পারে এমন কোনও তদন্তমূলক প্রতিবেদন বা ‘হিন্দুত্ব’র সমালোচনা’ প্রকাশিত হলেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় তোড়ে গালিগালাজ এমনকি খুনের হুমকিও। এমনও বলা হয়েছে যে এই আক্রমণকারীদের অধিকাংশই ‘প্রধানমন্ত্রীর ট্রল-সেনা’।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন