Advertisment

কাশ্মীর উপত্যকাও দেখে নি এমন মৃত্যু মিছিল

আক্রান্ত বাসে ছিলেন ৪২ জন জওয়ান, এবং এই বাসটি ছিল ৭৮ টি গাড়ি-বিশিষ্ট একটি কনভয়ের অংশ, যেটি ২,৫৪৭ জন সিআরপিএফ কর্মীকে নিয়ে যাচ্ছিল জম্মু থেকে কাশ্মীর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

Secirity personnal near awantipora blast site. Express Photo by Shuaib Masoodi 14/02/2019

কাশ্মীর উপত্যকায় আজ পর্যন্ত দেখা সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক একক জঙ্গী হানায় বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ৩৭ জন সিআরপিএফ জওয়ান। আহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার এই ঘটনায় বিস্ফোরক বোঝাই একটি টাটা স্কর্পিও চালিয়ে সিআরপিএফ-এর বাসে ধাক্কা মারে এক সুইসাইড বম্বার। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী সংগঠন জইশ-এ-মহম্মদ, এবং জানিয়েছে যে আত্মঘাতী ২০ বছর বয়সী ওই জঙ্গী পুলওয়ামা জেলারই বাসিন্দা।

Advertisment

আক্রান্ত বাসে ছিলেন ৪২ জন জওয়ান, এবং এই বাসটি ছিল ৭৮ টি গাড়ি-বিশিষ্ট একটি কনভয়ের অংশ, যেটি ২,৫৪৭ জন সিআরপিএফ কর্মীকে নিয়ে যাচ্ছিল জম্মু থেকে কাশ্মীর। শ্রীনগর শহর থেকে আন্দাজ ৩৫ কিমি দূরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি গলি থেকে বড় রাস্তায় বেরিয়ে বাসটিকে নব্বুই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধাক্কা মারে স্কর্পিও গাড়িটি। উল্লেখ্য, জম্মু থেকে প্রায় বারো ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে তিনটেয়, রওনা দেয় ওই কনভয়।

Pulwama CRPF attack দুর্ঘটনাস্থলে সুরক্ষা কর্মীরা। ছবি: সুয়েইব মাসুদি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এক উচ্চপদস্থ সিআরপিএফ আধিকারিকের মতে, "মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা, কারণ ঘটনায় আরো বেশ কিছু জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন।"

লেথপোরায় দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আক্রান্ত বাসটি দোমড়ানো, মোচড়ানো, তালগোল পাকানো অবস্থায় রাস্তার পাশের ডিভাইডারের ওপর দিয়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে জওয়ানদের দেহাংশ, গাছ থেকে ঝুলছে তাঁদের পরনের উর্দি এবং পোশাক পরিচ্ছদ। দ্বিতীয় একটি বাসেও ধাক্কা লাগে, কিন্তু তাতে বড়ো রকমের ক্ষতি হয় নি, সামান্য কিছু চোট আঘাত ছাড়া।

আরও পড়ুন: কুড়ি বছরে কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গী হামলা, মৃত কমপক্ষে ৩৭

"হঠাৎ করেই কনভয়ের মাঝখানে ঢুকে গেলো গাড়িটা, তারপরেই বিকট শব্দ," বলেন কনভয়ের আরেকটি গাড়ির আরোহী এক জওয়ান। "আমরা গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম, ওই বাসের আর কিছু নেই, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে মৃতদেহ।"

লেথপোরার এক বাসিন্দা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, এতটাই শক্তিশালী ছিল ওই বিস্ফোরণ, যে পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠেছিল তাঁদের। "আমরা বাড়িতে বসেছিলাম যখন কানফাটা একটা শব্দ শুনি, মাটি কেঁপে ওঠে। এত জোরে আওয়াজ হয় যে আমরা ছিটকে পড়ে যাই।"

এই হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয় জাতীয় সড়কে যান চলাচল, ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হয় না মিডিয়াকে। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জইশ-এ-মহম্মদের দাবী, সুইসাইড বম্বারের নাম আদিল আহমেদ দার, পুলওয়ামা জেলার গুন্ডিবাগ গ্রামের বাসিন্দা। গত বছরের মার্চ মাসে জইশে যোগদান করে সে।

উপত্যকার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি সমস্বরে এই ঘটনার নিন্দা করে এটিকে কাপুরুষতার নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছে। রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, "জম্মু কাশ্মীরে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের উপস্থিতি জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই হামলার পিছনে সীমান্তের ওপারের হাত রয়েছে, যেহেতু জইশ-এ-মহম্মদ এর দায় স্বীকার করেছে।" তিনি আরও বলেছেন, "এই ধরনের আক্রমণের দ্বারা আমাদের সুরক্ষা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের মনোবল নষ্ট করা যাবে না, এবং আমরা এই দুষ্ট শক্তির বিনাশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।"

জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতি টুইটারে লেখেন, "এই বীভৎস আক্রমণের নিন্দার ভাষা নেই। আরও কত প্রাণ গেলে থামবে এই পাগলামি?" আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা লেখেন, "আমি তীব্রতম ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। আহতদের জন্য প্রার্থনা এবং মৃতদের পরিবারবর্গের প্রতি সান্ত্বনা রইল।"

Pulwama CRPF attack আক্রান্ত বাসে ছিলেন ৪২ জন জওয়ান। ছবি: সুয়েইব মাসুদি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলের প্রাথমিক পরিদর্শনের পর মনে করা হচ্ছে, স্কর্পিও গাড়িটিতে ৫০-৬০ কেজি উঁচুদরের বিস্ফোরক ছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে স্কর্পিও এবং বাস উভয়েই নিমেষের মধ্যে দলা পাকানো ধাতব পিন্ডে পরিণত হয়। যার ফলেই মনে করা হচ্ছে, বাসের কোনো যাত্রীরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

সূত্রের আরও খবর, হামলা হয় জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কের ওপর লাতুমোদ নামক জায়গায়। জাতীয় সড়কের আশেপাশে অনেক ছোট ছোট পার্শ্ব রাস্তা রয়েছে, এলাকার ছোট শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে সিআরপিএফ: কী তাদের ভূমিকা

এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, "যা মনে হচ্ছে, গাড়িটিকে হাইওয়ের কাছাকাছি কোনো ছোট শহরে আক্রমণের জন্য তৈরি করা হয়, এবং কনভয় সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়। এই ধরনের ছোট, গোপন মুভমেন্টের ওপর নজর রাখা খুব কঠিন। গাড়িটা সিআরপিএফ-এর বাসটাকে নব্বুই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধাক্কা মারে, একদম মাঝ বরাবর, যাতে ম্যাক্সিমাম ক্ষতি হয়।"

সুরক্ষা বাহিনীর সূত্রের খবর, আইবি অর্থাৎ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কাছে যদিও আসন্ন আক্রমণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য ছিল না, কিছুদিন আগে জম্মু কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয় যে সুরক্ষা বাহিনীর বিবিধ কনভয়ের ওপর আইইডি হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ওই সূত্রের কথায়, "এর চেয়ে বেশি নির্দিষ্ট আর কোনো তথ্য ছিল না।"

jammu and kashmir kashmir pakistan militants
Advertisment