গতমাসে হরিদ্বারে ধর্ম সংসদের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশানা করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় ধর্ম সংসদের অন্যতম আয়োজন যাতি নরসিংহানন্দকে গ্রেফতার করল উত্তরাখণ্ড পুলিশ। এই নিয়ে হরিদ্বারে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে হল ২। এর আগে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওয়াসিম রিজভি ওরফে জিতেন্দ্র ত্যাগীকে।
ধৃত যাতি নরসিংহানন্দ গাজিয়াবাদের দাসনা মন্দিরের পুরোহিত। বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগে ত্যাগীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এর আগে হরিদ্বারের সর্বানন্দ ঘাটে অনশনে বসেছিলেন নরসিংহানন্দ। ত্যাগীর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। গোটাটাই 'অবিচার' বলে তোপ দাগেন। বলেন 'মুসলিম থেকে হিন্দুতে ধর্মান্তরিত হওয়ায় জিতেন্দ্র ত্যাগীরে গ্রফতার করা হল। এ জন্যই কোনও মুসলমান হিন্দুত্ব গ্রহণ করে না।'
সূত্রের খবর, শনিবার সকালে নরসিংহানন্দদের সঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রবল 'বাকবিতণ্ডা' হয়েছিল, সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকের কথায়, প্রহৃত সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে যাতি নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে আরেকটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে হরিদ্বারের পুলিশ সুপার স্বতন্ত্র কুমার বলেছেন, 'যাতি নরসিংহানন্দকে হরিদ্বার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং কোতোয়ালি থানায় নিয়ে এসেছে যেখান থেকে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। দসনার মন্দিরের পুরোহিতের গ্রেফতারিতে তাঁর অনুগামীরা থানা সামনে জড়ো হয়েছিল। ফলে সামান্য উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে পুলিশি হস্তক্ষেপে জমায়েত সরিয়ে দেওয়া হয়।
গত ১৭-১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে বসেছিল ধর্ম সংসদের আসর। সেখানকার একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। দেখা যাচ্ছে, জিতেন্দ্র ত্যাগী ২০ লক্ষ মুসলমানকে নিশানা করে তাদের মেরে ফেলার নিদান দিচ্ছেন। যা নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। ২৩শে ডিসেম্বর হরিদ্বার পুলিশের কাছে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন গুলবাহার খান। পরে, ২রা জানুয়ারি হরিদ্বারের ধর্মসভার ঘটনার বিরুদ্ধে নদিম আলি আরও একটি অভইযোগ থানায় দায়ের করেন। কিন্তু তারপরও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। ফলে পুলিশি নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা গয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র, দিল্লি পুলিশ ও উত্তরাখণ্ড সরকারকে গত সোমবার নোটিস পাঠায়।
পুলিশের খাতায় পাঁচ অভিযুক্তের নাম ছিল। এরা হলেন, জিতেন্দ্র ত্যাগী, ধর্মদাস মহারাজ, অন্নপূর্ণা মা, সাগর সিন্ধুরাজ মহারাজ ও যাতি নরসিংহানন্দের।
শীর্ষ আদালত মামলা গ্রহণের পরই ঘটনার তদন্তে গড়া হয় বিশেষ তদন্তকারী দল। গ্রেফতার করা হয় জিতেন্দ্র ত্যাগীকে। সমন জারি করা হয় যাতি নরসিংহনাদের বিরুদ্ধে। থানায় গিয়ে তিনি সকলকে অভিশাপ দেন। বলেন, 'সাধুদের বিরোধিতা করা। তোমরা, তোমাদের বাচ্চাকাচ্চারা সবাই মরবে।' কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। আপাতত পুলিশের জালে সাধু নরসিংহানন্দ ।
Read In English