স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাঁর সরকার গণমাধ্যমের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বরাবর মাথায় রাখবে। রবিবার এমনটাই প্রতিশ্রুতি দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নয়ড়ায় সেক্টর ১০-এ যেখানে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কার্যালয়, তার সামনে ২.২ কিলোমিটার রাস্তা তিনি এক্সপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করেন- রামনাথ গোয়েঙ্কা মার্গ। আদিত্যনাথ বলেন যে, জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন একটি উল্লেখযোগ্য দিন। কারণ, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি দেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকা জরুরি অবস্থার বিরোধিতায় এবং বাক স্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদপত্রের সুরক্ষায় রামনাথ গোয়েঙ্কার ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
আদিত্যনাথ বলেন, 'দিনটি আমার কাছে আবেগগত দিক থেকে এবং গণতন্ত্র রক্ষার দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি না যে এটা নিছক কাকতালীয়। এটা ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা যে ২৫ জুন রামনাথ গোয়েঙ্কাজির নামে স্মৃতিসৌধের নামকরণ করা হচ্ছে… তিনি সেই ব্যক্তি যিনি শুধুমাত্র সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেই নয়, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, যা ৪৮ বছর আগে আক্রমণের মুখে পড়েছিল।'
যোগী বলেন, 'এটা আমার কাছে গর্বের বিষয় যে আমি উত্তরপ্রদেশের আর্থিক রাজধানী নয়ডায় রামনাথ গোয়েঙ্কাজির নামে এই রাস্তাটি উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি। আমি রামনাথ গোয়েঙ্কাজি এবং যাঁরা এটিকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই সমস্ত গণতন্ত্রের সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। উত্তরপ্রদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করার ষড়যন্ত্রের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। ২৫ জুন, ১৯৭৫ ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ভারত সেই জনগণের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ দেখেছে, যাঁরা গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নিজেদের সবকিছু বাজি রেখেছিলেন।'
রামনাথ গোয়েঙ্কাকে গণমাধ্যমের 'ধ্রুব তারা' হিসেবে বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, 'যখনই আমরা গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলি, তাঁর নাম সর্বদা শ্রদ্ধার সঙ্গে নেওয়া হয়।'
রামনাথ গোয়েঙ্কাকে স্মরণ করে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, 'বাপু (মহাত্মা গান্ধী)-র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে রামনাথ গোয়েঙ্কা ১৯৩২ সালে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিহারের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে রামনাথ গোয়েঙ্কাজি শুধুমাত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অগ্রণী ভূমিকাই পালন করেননি, বরং দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস শুরু করেছিলেন। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং সংসদে জনগণের কণ্ঠস্বরকে প্রশস্ত করেছেন।'
যোগী বলেন, 'রামনাথ গোয়েঙ্কার উত্তরাধিকার অন্যদেরও স্পর্শ করেছে, গোরখপুর-ভিত্তিক গীতা প্রেসে গান্ধী শান্তি পুরস্কার চালু হয়েছে। গীতা প্রেস ১৯২৩ সালে গোরক্ষপুরে প্রয়াত জয়দয়াল গোয়েঙ্কা তাঁর সমর্থকদের নিয়ে শুরু করেছিলেন। এটি গীতা ও বৈদিক সাহিত্যকে তার কল্যাণ পত্রিকার মাধ্যমে এবং মানুষকে পথ দেখানোর জন্য সম্পাদকীয়র মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলে। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত 'ভাইজি' হনুমান প্রসাদ পোদ্দার। যার সঙ্গে গোয়েঙ্কা পরিবারের সম্পর্ক সুপরিচিত।' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যেখানে বক্তৃতা করেন, সেখানে একটি গ্রানাইট ফলক উন্মোচন করেছেন। যা, মুক্ত সংবাদপত্রের বিষয়ে রামনাথ গোয়েঙ্কার চিন্তাভাবনাকে তুলে ধরেছে।
যোগীকে স্বাগত জানিয়ে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কার্যনির্বাহী পরিচালক অনন্ত গোয়েঙ্কা বলেন, 'উদ্বোধন হল আসলে একটি উদযাপন। আর, এটা সত্য যে রামনাথজির নীতিগুলি এখনও টিকে আছে। এই মুহুর্তে এত উত্সাহের সঙ্গে আপনি তাঁকে সমর্থন করছেন। তবে, এটাও সত্য যে আপনি জরুরি অবস্থার সময়ে শিশুর বয়সি ছিলেন। আসলে এটা প্রমাণ যে, রামনাথজির অবর্তমানে ৩২ বছর পার হয়ে গেছে। তারপরও আমরা তাঁকে ভালো কাজের জন্য স্মরণ করি। জাতি ঠিক কত কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে, তা বোঝার জন্য আপনাকে জরুরি অবস্থার মধ্যে বাঁচতে হয়নি। কারণ, আমরা বিজয়ী হয়েছি এবং সেই অন্ধকার পর্বের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।'
অনন্ত গোয়েঙ্কা আরও বলেন, 'রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। স্বাধীনতা আজও যেমন প্রিয়, আমাদের নাগরিকদের কাছে ৪৮ বছর আগেও তেমনই প্রিয় ছিল। এটি একটি প্রমাণ যে আমরা সবাই একসাথে কাজ করি, আমাদের রাজনীতি যাই হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত করব যে আমাদের আর কখনও যাতে জরুরি অবস্থার মধ্যে পড়তে না-হয়। অনন্ত গোয়েঙ্কা তাঁর এবং তাঁর বাবা, এক্সপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান বিবেক গোয়েঙ্কার হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং নয়ডা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।