ফের এক পণ্ডিতের নারকীয় হত্যা কাশ্মীরে হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিত রাহুল ভাটের হত্যাকাণ্ডের জেরে শুক্রবার ক্ষুব্ধ কাশ্মীরিদের রোষের মুখে পড়লেন শীর্ষ বিজেপি নেতারা। পণ্ডিতদের পরিযায়ী শ্রেণির মানুষ বানিয়ে তাঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে তোপ দাগেন কাশ্মীরি হিন্দুরা। তাঁদের ফের উপত্যকায় পাঠানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থান যোজনার নামে নয়, বরং মরতে।
এদিন জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবিন্দর রায়নাকে চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী কবিন্দর গুপ্তা। রায়না এবং গুপ্তাকে ক্ষুব্ধ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা বলেন, "আপনারা আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন শুধু প্রাণ মারতে। আমাদের তরুণরা রোজ খুন হচ্ছে, এতদিন আপনারা কী করেছেন?"
আরও একজন বিক্ষুব্ধ চেঁচিয়ে বলেন, "আপনারা আমাদের বলির পাঁঠা বানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জন্য কোনও সুরক্ষা নেই এখানে। সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছি এই দিন দেখতে?"
রাহুল ভাটের খুনের পর উপত্যকায় ক্ষোভের বাতাস বইছে। বৃহস্পতিবার বুদগামে নিজের অফিসে খুন হন সরকারি কর্মচারী রাহুল ভাট। এদিন তাঁর দেহ নিয়ে আসা হয় বান তালাব শ্মশানে। তাঁর চিতার আগুন দেওয়ার সময় উপস্থিত জনতা পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
বিজেপি সভাপতি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ পণ্ডিতদের একটাই দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করবে। তাঁদের দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে এই সন্ত্রাসের জবাব দিতে হবে।
এদিন পণ্ডিতরা শ্রীনগর-বুদগাম হাইওয়ে অবরোধ করেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পুলিশের এই অতি-সক্রিয়তাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, “কাশ্মীরের মানুষের জন্য এটা নতুন কিছু নয়। বার বার প্রতিবাদ-আন্দোলনকে প্রশাসন হাতিয়ার দিয়ে উৎখাত করে। যদি উপরাজ্যপালের সরকার মানুষকে সুরক্ষা না দিতে পারে তাহলে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রতিবাদ দেখানোর অধিকার আছে।”
এদিন পুলিশ-প্রশাসন এসে বিক্ষোভকারী পণ্ডিতদের সরে যেতে বললেও তাঁরা জানায়, যতক্ষণ না উপরাজ্যপাল এসে দেখা করছেন তাঁরা সরবেন না। এক বিক্ষোভকারী অভিযোগ করেন, “পুলিশ লাঠিচার্জ করছে আমাদের উপর প্রশাসন বার বার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে আউড়াচ্ছে। এটাই কি স্বাভাবিক জীবন? ওঁরা আমাদের জম্মুতে সরিয়ে নিয়ে যাক আর তার পর এই নিরাপত্তা ইস্যুকে ঠিক করুক।”
বুদগামের এক প্রতিবাদী পণ্ডিত বিমল ভাট দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানান, “এটা প্রথম কোনও খুন নয়। সরকার আমাদের সুরক্ষা নিয়ে অনেক দাবি করেছে। কিন্তু ওঁদের সব আশ্বাস ব্যর্থ। ছমাস পর আবার একটা খুন হবে, আবার বিক্ষোভ হবে। এটার একটা শেষ চাই।”