কেমন আছে কাশ্মীর? পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভূস্বর্গে পৌঁছলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ২৩ জন সদস্য। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির ভিত্তিতে কোনও বিদেশি প্রতিনিধি দল উপত্যকায় গেল। জানা গিয়েছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তরফে ভারতে আগত মোট ২৭ সদস্যের মধ্যে ২২ জনই দক্ষিণপন্থী দলের নেতা। এঁরা বেশিরভাগই শরণার্থী বিরোধী।
সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্ব সেরেছেন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দেশের অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল। বিদেশি প্রতিনিধিদের কাশ্মীর যাওয়ার অনুমতি মিললেও কেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আটকানো হচ্ছে? প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস, বামেরা।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে "অনন্য জাতীয়তাবাদ" বলে কটাক্ষ করেন। কংগ্রেস সাংসদ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আনন্দ শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "এই সিদ্ধান্ত দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন। যখন বিরোধীদের সর্বদল প্রতিনিধিরা কাশ্মীর গিয়ে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম তখন শ্রীনগর বিমানবন্দরেই আমাদের আটকায় প্রশাসন। বহু আবেদনেও অনুমতি দেওয়া হয় নি। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সংসদেও কিছু জানায় নি। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটিকেও কিছু জানানো হয় না। কিন্তু, মোদী সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে চায়। এটা সরকারের স্ববিরোধীতা। বলা হচ্ছে কাশ্মীর ভারতের বিষয়। কিন্তু আসলে কেন্দ্র ভারতের সেই দাবিরই বিরোধীতা করছে।"
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিতে অনড় সেনা, বিজেপির প্রস্তাব উপ-মুখ্যমন্ত্রীত্ব
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে ট্যুইট করেন আরেক কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি জানান, "নিজের দেশের বিরোধী দলের সদস্যদের কাশ্মীরের অবস্থা দেখতে যাওয়া থেকে আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপের রাজনীতিবিদরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন। এই পদক্ষেপ দেশের সংসদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা।"
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইটে জানিয়েছেন, "কেন তাহলে ভারতের বিরোধী দলের সদস্যদের কাশ্মীর যাওয়া থেকে আটকানো হলো? এখনও সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশে এতদিনে আমি মাত্র একবার সেখানে যেতে পেরেছি। এই পদক্ষেপেই মোদী সরকারের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট।" সিপিআই-এর ডি রাজার প্রশ্ন, "কাশ্মীর এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। কিন্তু তা নিয়ে ভারত সরকারের নীতি কী, তা বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, সরকার নিজেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের কাশ্মীর যাওয়ার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। ফলে নানা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: শেষ রক্ষা হল না, গর্ত থেকে উদ্ধার হল সুজিতের পচাগলা মৃতদেহ
৩৭০ ধারা বাতিলের পর কেমন আছেন কাশ্মীরিরা? তাঁদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ ভূস্বর্গে যান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ২৭ জন সদস্য। সোমবার এই প্রতিনিধিদল দিল্লিতে পৌঁছনোর পরে সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ৩৭০ ধারা বিলোপের সরকারি সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। দোভাল তুলে ধরেন নিরাপত্তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি। উপত্যকা থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তা জানান দোভাল।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়, “প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদরা জম্মু ও কাশ্মীর-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করবেন। তাঁদের এই সফরের মাধ্যমে জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখ অঞ্চলের উন্নয়ন ও প্রশাসন সম্পর্কে ধারণা করা ছাড়াও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় যে ভিন্নতা রয়েছে, তা বুঝতে পারবেন প্রতিনিধিদল।”
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা, জখম ২০
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ওপরই জোর দিয়েছেন। বৈঠকে পাকিস্তানের নাম না নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রনীতি হিসাবে ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি এবং পাক সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে অবহিত করা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাংসদদের। সেদিন বিএন ডান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমরা আগামীকাল জম্মু-কাশ্মীর যাব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের ৩৭০ ধারা রদের বিষয়টি বলেছেন। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি দেখতে চাই। সেখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমরা চাই সব জায়গায় শান্তি স্থাপন হোক।”
Read the full story in English