দুই ছোট বাচ্চার মা। তাঁর স্টপেজ থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দূরে একজন বৈদ্যুতিক কর্মীর বাড়ি। আবার, সম্প্রতি বিবাহিত এক সেলস এগজিকিউটিভ- তাঁরা সেই ১৪ জনের অন্যতম, যাঁরা রবিবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানগ্রাম (বিজয়নগরম) জেলায় দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ বছর বয়সি ছাল্লা সতীশ মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করেছেন। বিশাখাপত্তনমের এক জুয়েলারি দোকানের সেলস এগজিকিউটিভ সতীশ সেই অভিশপ্ত বিশাখাপত্তনম-রায়গড় প্যাসেঞ্জার স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী, যে ট্রেনের সঙ্গে বিশাখাপত্তনম-পালাসা প্যাসেঞ্জারের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়ছেন ১৪ যাত্রী।
মৃত যাত্রীদের মধ্যে ছাল্লা সতীশের পরিবারের দাবি, গৃহকর্তা হিসেবে সতীশ একজন প্রাণবন্ত এবং স্নেহময় ব্যক্তি। তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে বরাবরই এক আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে থেকেছেন। তাঁর খুড়তুতো ভাই সি রাজু বলেন, 'সতীশ একজন নরম প্রকৃতির যুবক ছিলেন। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। তাঁর অনেক বন্ধু ছিল। তাঁর মৃত্যু পরিবারের জন্য এক বড় ট্র্যাজেডি। ঘটনার দিন আনাকাপল্লিতে তাঁর মায়ের সঙ্গে সতীশ দেখা করতে এসেছিলেন। সদ্য বিবাহিত সতীশ রেখে গেলেন ২৫ বছর বয়সি স্ত্রীকে।' পরিবার সূত্রে খবর, সতীশ ছোটবেলায় বাবাকে হারান। লালিত-পালিত হয়েছিলেন মায়ের কাছে। রবিবার, তিনি পিডিথালি আম্মাভারু উত্সবের জন্য ভিজিয়ানাগ্রাম যাচ্ছিলেন। রবিবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে তাঁর আসার কথা ছিল। এই মৃত্যুর খবর যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরাই অবাক হয়ে যাচ্ছেন।
কাঞ্চুবারাকি রবি (৩৫), একজন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী। তিনি আলামান্দা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে এই ট্র্যাজেডি ঘটে। তিনি রেলওয়ে স্টেশনে তাঁর মোটর সাইকেল পার্ক করেছিলেন এবং কিছু কেনাকাটা করতে বিশাখাপত্তনমে গিয়েছিলেন। ভিজিয়ানগ্রামের গোদিমুম্মু গ্রামের ওই বাসিন্দার আর ফেরা হল না। তাঁর স্ত্রী কুমারী বলেন, 'আমাদের দুই মেয়ে। ওই দুই মেয়েই ছিল তাঁর জীবন। তিনি খুব ভোরে চলে যাওয়ায় পর থেকেই মেয়েরা অপেক্ষায় ছিল, তিনি ফিরে আসবেন।' রবির খুড়তুতো ভাই কে আনন্দ কান্নার ফাঁকে বলেন, 'আমি এখনও জানি না কীভাবে দুই ছোট বাচ্চাকে ওদের বাবার মৃত্যুর কথা জানাব। এখন এই পরিবারের দেখাশোনা কে করবে?'
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডি ভিজিয়ানাগ্রাম সরকারি হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা এবং রাজ্য থেকে আহতদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ আধিকারিকদের দিয়েছেন। রেড্ডি আরও বলেছিলেন যে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অন্যান্য রাজ্যের পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য রাজ্যের আহতদের প্রত্যেককে ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন:
কাঞ্চুবারাকি রবি (ভিজিয়ানাগ্রাম)
জি লক্ষ্মী (শ্রীকাকুলাম)
কারানাম অ্যাপলানাইডু (ভিজিয়ানাগ্রাম)
চল্লা সতীশ (ভিজিয়ানাগ্রাম)
এসএমএস রাও (বিশাখাপত্তনম)
চিন্তালা কৃষ্ণম নাইডু (ভিজিয়ানাগ্রাম)
পিল্লা নাগারাজু (ভিজিয়ানাগ্রাম)
এম শ্রীনিবাস (ভিজিয়ানাগ্রাম)
তেনকালা সুগুনাম্মা (শ্রীকাকুলাম)
রেড্ডি সীথাম নাইডু (ভিজিয়ানাগ্রাম)
মাজি রামু (ভিজিয়ানাগ্রাম)