মর্মান্তিক! পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যের পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু। অথৈ জলে গোটা পরিবার। পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস আত্মীয়দের।
দিল্লির বুদ্ধবিহার এলাকার বাসিন্দা বছর আটত্রিশের সলিল ত্রিপাঠী। গত বছর করোনায় তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে গোটা সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁরই কাঁধে। একটি রেস্তোরাঁয় ম্যানেজারের চাকরি করতেন যুবক। সেই আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম দশা হতো তাঁর। বাড়তি আয়ের জন্য মাস দু'য়েক আগেই জোম্যাটোর ডেলিভারি এজেন্টের চাকরি নিয়েছিলেন ওই যুবক। দিনরাত পরিশ্রম করে সংসার চালানোর খরচ জোগাড় করতেন সলিল। শনিবার রাতের দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল সলিলের। পুলিশের জিপের ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু যুবকের।
ঠিক কী ঘটেছিল শনিবার রাতে? জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে বাইকে খাবার পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন সলিল। দিল্লির রোহিনী এলাকায় তাঁর বাইকে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি পুলিশের জিপ। বাইক থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান সলিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, জিলে সিং নামে এক কনস্টেবল জিপ নিয়ে একটি বাসকে ধাক্কা দেওয়ার আগে বাবা সাহেব আম্বেদকর হাসপাতালের কাছে সলিলের বাইকে সজোরে ধাক্কা মারে। ওই কনস্টেবল মত্ত অবস্থায় ছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার রাতে জিপের ধাক্কায় উড়ে গিয়ে রাস্তার ধারে ডিভাইডারের উপরে পড়েন সলিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা ঘটনার ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ছবি তুলছেন। কনস্টেবল সিংকে তার পুলিশের ইউনিফর্মে ভিতরে বসে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রাই তাকে ধরে ফেলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ওই পুলিশ কনস্টেবল।
ডিসিপি (রোহিনী) প্রণব তায়াল বলেন, “রাত ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পারি। একটি গাড়ি বাইক এবং ডিটিসি বাসকে ধাক্কা দেয়। বাইক আরোহী সলিলের দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয়। কনস্টেবল সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং মৃত্যুর ধারায় একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।” ওই কনস্টেবল মত্ত অবস্থায় ছিলেন কিনা তা জানতে তাঁর রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- থানার মধ্যেই রূপান্তরকামীদের নগ্নতল্লাশি, লিঙ্গ যাচাইয়ের চেষ্টা! কাঠগড়ায় ত্রিপুরা পুলিশ
এদিকে, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে দিশেহারা সলিলের মা, স্ত্রী ও পুত্র। অভিযুক্ত কনস্টেবলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সলিলের খুড়তুতো দাদা রাহুল বলেন, “পরিবারকে সাহায্য করার জন্য গভীর রাতেও কাজ করত সলিল। ওই রাতেও খাবার সরবরাহ করতে যাচ্ছিলেন সলিল। বিএসএ হাসপাতালের বাইরে গাড়িটি তাকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর চোট পান তিনি। গাড়ির চালক বেপরোয়া… সে আমার ভাইকে মেরেছে।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে ভীষণ চিন্তায় থাকত সলিল। দুই মাস আগে তিনি জ্যোমাটোতে কাজ শুরু করেন। গত বছর তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী, ছেলে এবং মা তাঁরই উপর নির্ভরশীল ছিলেন। আমরা তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি, কিন্তু এটা কঠিন। সলিল একজন যত্নশীল এবং পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন।'' সলিল ত্রিপাঠীর মর্মান্তিক এই পরিণতির পরেই জোম্যাটোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সলিলের পরিবারের পশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।
Read full story in English