খুবই নম্রভাবে ফোনে উত্তর দিচ্ছিলেন মিতা সাঁতরা, তবে শুরুতেই পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন বাজে কথা বলার সময় নেই তাঁর। ”এ কথা বলে দিলাম যাতে আপনার প্রশ্ন সাজাতে সুবিধে হয়।”
দু সপ্তাহ আগে হাওড়ার বাসিন্দা মিতা সাঁতরা তাঁর স্বামী বাবলু সাঁতরাকে হারিয়েছেন। সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে তাঁর। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় যে জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান মারা যান, বাবলু ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সারা দেশের মানুষ যখন নিহতদের জন্য শোকপালন করছে, সে সময়ে এক নিহত জওয়ানের স্ত্রী-কে ট্রোলিং ও সাইবার আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
৩২ বছর বয়সী মিতা সাঁতরা তাঁর স্বামীর সৎকারের দিন বলেছিলেন, যুদ্ধ কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তিনি বলেছিলেন, ”আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধে আমার মত বহু স্ত্রী স্বামীকে হারাবে। আমার মত অনেক মেয়ে তাদের বাবাকে হারাবে। আমি চাই দোষীরা শাস্তি পাক।”
এর পরেই তাঁর উদ্দেশে ট্রোলিং শুরু হয়। যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্য নানা রকম প্রচার চলতে তাকে তাঁর বিরুদ্ধে। সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই যুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের জন্য তাঁকে ভীতু বলে অভিহিত করেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে নিরুৎসাহী হওয়ার জন্য তাঁর দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
আরও পড়ুন, সার্জিকাল স্ট্রাইকে নিরুত্তাপ নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী, প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার
এসব ক্রমাগত ট্রোলিং নিয়ে তাঁর যে একেবারে কিছু মনে হয়নি তা নয়, তবে সে জন্য স্থৈর্য হারাতে রাজি নন তিনি। মিতা বললেন, সোশাল মিডিয়ার ট্রোলিং নিয়ে বাবার মত মনের অবস্থা নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার আর কিছুতেই কিছু এসে যায় না।
হাওড়ার বাউড়িয়ায় শাশুড়ি ও মেয়ের সঙ্গে থাকেন মিতা। একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করেন তিনি। মিতা বিশ্বাস করেন, যুদ্ধ কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ শুধু মানুষের প্রাণহানিই ঘটায় না, দেশের অর্থনীতিও ধ্বংস করে দেয়। তিনি বললেন, ”আমি বুঝতে পারছি না যে আমার যুদ্ধবিরোধী অবস্থান কীভাবে অন্য কিছুতে বদলে দেওয়া হল! আমি যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। জঙ্গি হামলাতেই আমার স্বামীর প্রাণ গেছে।”
২০১৭ সালে গুরমেহের কাউরও সোশাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার হন। কার্গিল যুদ্ধে নিহত ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংয়ের কন্যা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গুরমেহের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। এক ভিডিওয় তিনি বলেছিলেন, আমার বাবাকে পাকিস্তান মারেনি, মেরেছে যুদ্ধ। বিশিষ্ট ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগও গুরমেহেরকে ট্রোল তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন।
কিন্তু মিতা আরও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর জিজ্ঞাসা, "সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়নি কেন! এটা কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা নয়!"
এই সব ট্রোল যারা করছে, তাদের কিছু বলবেন? মিতার উত্তর, "আপনাদের পরিবারের কেউ জঙ্গি হামলায় মারা গেলে তাদেরও এরকমই বলতেন তো!"