সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় এককালে বাঙালিদের উত্তীর্ণ হওয়ার হার ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সেই গৌরবের দিন আজ নেই। হালে বিগত ২/৩ বছরে সর্ব ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙালিদের সাফল্যের হার অবশ্য তুলনামূলক ভালো। তবে রাজ্য এবং সর্ব ভারতীয় স্তরের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মানসিকতা এ রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে কম, এমন একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এই সব নিয়েই বিস্তারিত গত ৭ ডিসেম্বর বিস্তারিত আলোচনা হল ব্রিটিশ কাউন্সিলে। সেখানকার লাইব্রেরিতে সিভিল সার্ভিসের বইপত্তরের জন্য আলাদা বিভাগ উদ্বোধন উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন ২০১৪ সালের আইএএস ব্যাচের ধবল জৈন।
বর্তমানে হাওড়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ধবল জৈন নিজে কলকাতার। স্বাভাবিক ভাবেই এ রাজ্যের সাংস্ক্তিক পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি। রাজ্যের অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীর ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের ভয় কাজ করে, সে কথা নিজেই স্বিকার করলেন ধবল। জানালেন আসলে ডব্লিউবিসিএস(রাজ্যস্তর) এবং ইউপিএসসি(কেন্দ্রীয়)-এর পাঠক্রমে তেমন কোনও ফারাক নেই। প্রস্তুতিপর্বে তেমন অসুবিধে হওয়ারও কথা নয়। শুধু সর্ব ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরণ বিশ্লেষণী হয়, যা রাজ্য স্তরের পরীক্ষায় হয়না।
আরও পড়ুন, ‘সিভিল সার্ভিস আমার জন্য না’, এই মানসিকতা কাটানোই আসল চ্যালেঞ্জ
উপস্থিত চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতিপর্বে দিনে কতক্ষণ পড়াশোনা জরুরি? উত্তরে ধবল জানালেন তিনি নিজে বেসরকারি ক্ষেত্রে ছাকরি করতে করতেই ইউপিএসসি-র জন্য তৈরি হয়েছিলেন, সুতরাং দিনে ৪ ঘন্টার বেশি দেওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। তাঁর কথায়, "আমি স্মার্ট পড়াশোনায় বিশ্বাসী। অনেকেই বলে সারাদিনে আড়াই ঘণ্টা খুঁটিয়ে কাগজ না পড়লে এ ধরণের পরীক্ষায় সফল হওয়া যায় না। আমি ২০ মিনিটের বেশি খবরের কাগজ পড়ার সময় পেতাম না।কী পড়ব, কেন পড়ব, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। আর সব বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য আমি যে বই-ই পড়েছি, তাও না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছি। কার কোন ধরনের পড়া বা দেখার দিকে ঝোঁক বেশি, সেটা বুঝে প্রস্তুতির ধরণ সেরকম করে ফেলতে হবে। কোচিং নিলে সুবিধে হয়, নিয়মিত চর্চার মধ্যে থাকা যায়। কিন্তু কোচিং ছাড়াও ১০০ শতাংশ সাফল্য সম্ভব"।
আজকাল সমস্ত আঞ্চলিক ভাষাতেই সিভিল সার্ভিস দেওয়া গেলেও ইংরেজিতে উত্তর লেখার একটি সুবিধের কথা উল্লেখ করলেন হাওড়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ধবল জৈন। সারা দেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বইগুলি এখনও ইংরেজি ভাষাতেই সহজলভ্য। অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও সাফল্য যদি না আসে, পুরো সময়টাই কি বৃথা হয়ে যাবে? তিনি অবশ্য একেবারেই মনে করেন না তেমনটা। বললেন, "সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি একটা মানুষকে অনেকটা পালটে দেয়। তাঁর সমাজকে দেখা, তাঁর সচেতনতা, নাগরিক হিসেবে দায়িত্ববোধ তাঁকে মানুষ হিসেবে আরও উন্নত করে তোলে, পরীক্ষায় সফল হলেও, আবার না হলেও"।