সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙালির সংখ্যা এত কম কেন, সেই প্রশ্ন একাধিকবার উঠে এসেছে বিভিন্ন আলোচনায়। ২০১৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করা ৭৫০ জনের মধ্যে ৮ জন বাঙালি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাফল্যের হার এক শতাংশ। অথচ সিভিল সার্ভিসে প্রথম উত্তীর্ণ হওয়া ভারতীয় কিন্তু বাঙালিই। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরবর্তীকালেও সমাজের নানা ক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে বাঙালি। তবে প্রশাসনে এত ঘাটতি কেন বাঙালির? কেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে গোনাগুনতি বাংলাভাষী আধিকারিক? এরকমই এক গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হলো শনিবারের এক সন্ধ্যায়। আলোচনায় অংশ নিলেন এবছর সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিসে সফল হওয়া বাংলার এক ঝাঁক তরুণ।
রাজ্যস্তরের প্রশাসনে উচ্চপদে বসা আধিকারিকরা ভিন্ন ভাষাভাষী (বাংলায় দীর্ঘদিন থাকলে সে সমস্যা অবশ্য হয় না) হলে মূল সমস্যা যেটা হয়ে থাকে, বাংলার ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে মানসিক দূরত্ব থাকায় রাজ্যের হৃদস্পন্দন বুঝতে তাঁদের সমস্যা হয়। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা যাদের হাতে, তাঁদের এই স্পন্দন বোঝা খুব প্রয়োজন। তাই এই পেশায় বাঙালির সংখ্যা বাড়লে আখেরে এ রাজ্যের মানুষেরই লাভ। সে কারণেই বাংলা থেকে সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিসে আসা আধিকারিকেরাই উদ্যোগী হয়েছিলেন এই নিয়ে এক আলোচনাসভার আয়োজন করতে। এ বছরের সফল পরীক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জানিয়ে শুরু হল আলোচনা।
Debjyoti Barman, who made it UPSC selected candidates' list, shares his success story with Civil Service aspirants pic.twitter.com/WI5vR8tP7q
— IE Bangla (@ieBangla) July 7, 2019
শুনে নেওয়া যাক ইউপিএসসি তালিকায় জায়গা করে নেওয়া কিছু সফল পরীক্ষার্থীর গল্প। যেমন মৈনাক ঘোষ, সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ৩১। কলকাতাতেই বড় হওয়া, পড়াশোনা। হিন্দু স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বিধাননগর সরকারি কলেজ থেকে জুলজি অনার্স। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোরে পিএইচডি-তে ভর্তি হয়েও পারিবারিক কারণে ফিরে আসতে হয় শহরে। তারপর কলেজ সার্ভিস কমিশনের চাকরি দিয়ে দিল্লির সরোজিনী নাইডু কলেজে অধ্যাপনা করতে করতে সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু। এর আগেও দুবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। র্যাঙ্ক মনমতো না হওয়ায় ফের পরপর দু'বার পরীক্ষায় বসেন।
দেবজ্যোতি বর্মন (র্যাঙ্ক ৬৪৭), এবং সায়ন্তন ঘোষ (র্যাঙ্ক ৬৪৭), দুজনেই পেশায় চিকিৎসক। তবে তাঁরা মনে করেন, মানুষের সেবা করার জন্য চিকিৎসাই একমাত্র পথ নয়, প্রশাসনিক পরিকাঠামো উন্নত করাও খুব জরুরি। দেবজ্যোতি জানালেন, "সমস্যা রোগ নিয়ে যতটা না হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয় পরিকাঠামোতে। সেই পরিকাঠামো তৈরি করা প্রশাসনের কাজ। বিহারে জাপানি এনকেফেলাইটিস নিয়ে যে সমস্যা চলছে, সেখানে কিন্তু রোগটা আসল সমস্যা না, সমস্যা মানুষের অপুষ্টি। আর সমস্যা, স্থানীয় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব, যেখানে অন্তত প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা করা যায়।"
রাজ্যে ইউপিএসসির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই, স্বীকার করে নিয়েই সফল পরীক্ষার্থীরা জানালেন, আজকাল ইন্টারনেটের যুগে প্রচুর তথ্য নেটেই পাওয়া যায়। প্রস্তুতির অনেকটাই সেভাবে সম্ভব। "প্রস্তুতি নেওয়ার চেয়েও বড় কথা, আপনি সত্যিই প্রস্তুতি নিতে চান কি না।"
সায়ন্তন, মৈনাকরা মনে করেন, জীবনে চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা খুব দরকার। অনেকেই একটা পেশায় চলে এলে নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান না। ভাবেন, নতুন করে শুরু করা অসম্ভব। তবে অসম্ভব যে নয়, প্রমাণ করেছেন তাঁরা নিজেরাই।