সোমবার সকাল। বিনা নোটিসেই তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের (Madan Mitra) বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই (CBI)। ঘরে তাঁর করোনায় আক্রান্ত স্ত্রী অর্চনা মিত্র (Archana Mitra)। স্বাভাবিকবশতই বাড়িতে কোভিড রোগী থাকার ফলে সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এদিন সকালে যেন এক লহমায় সব তছনছ হয়ে গেল। শিঁকেয় উঠল করোনাবিধি। বাড়িতে প্রায় জনা বিশ-ত্রিশেক সিবিআই আধিকারিক ঢুকে পড়লেন। তারপর হুলূস্থূল কাণ্ড! নারদা মামলায় (Narada Scam) মদন মিত্রকে আটক করে নিয়ে আসা হল নিজাম প্যালেসে। বেলা গড়াতেই ঘটনা চূড়ান্ত নাটকীয়তায় পৌঁছয়। কিন্তু এসবের মাঝেই মদন মিত্রের ছেলে স্বরূপ জানিয়েছেন, তাঁর মা কোভিড রোগী বাড়িতেই ছিলেন। এমতাবস্থায় নিয়মভঙ্গ করেই বাবাকে তুলে আনা হয়। খবর প্রকাশ্যে আসতেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।
“আমরা ছাড়া শুভেন্দু-মুকুল ভাল"- মদন মিত্র
সোমবার রাতে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) কন্যা প্রিয়দর্শিনীর মুখেও সেই আশঙ্কার কথা শোনা যায়। স্বাভাবিকবশতই তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে যে, বাড়িতে করোনায় আক্রান্ত রোগী থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কোভিড বিধি লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমন পদক্ষেপ করতে পারে? তাঁদের একাংশের আবার এও আশঙ্কা, যদি সেখান থেকেই সংমক্রণ ছড়ায়? তাহলে সেই দায় কি নেবে সিবিআই?
প্রসঙ্গত, দিন কয়ের আগে নিজেও মারণ ভাইরাসের কবলে পড়েছিলেন বিধায়ক। তবে সপ্তাহ গড়াতেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এরপরই কোভিডে আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী। তার মাঝেই পুরনো নারদ মামলার কোপ পড়ে।
রাতে সিবিআই দপ্তর থেকে বেরিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পথে মদন বলে যান, “আমরা ছাড়া শুভেন্দু-মুকুল ভাল। বাড়িতে আমার স্ত্রী কোভিডে আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেই ২০-৩০ জন সিবিআই আধিকারিক আমার বাড়িতে ঢুকে পড়েন।”
উল্লেখ্য, এদিন তৃণমূলের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee) এবং বিধায়ক মদন মিত্র ছাড়াও, তৃণমূল-ত্যাগী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে (Sovan Chatterjee) গ্রেপ্তার করে সিবিআই। নেপথ্যে বছর খানেক আগের সেই নারদ মামলা। দিনভর চূড়ান্ত নাটকীয়তার পর একবার জামিন দিয়ে ফের গ্রেপ্তার করে তাঁদের দু'দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। শোভন-মদনকে গতরাতেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য এসএসকেএমের উডবার্নে ভর্তি কার হয়। এখন তাঁদের পরিস্থিতি স্থিতিশীল। তবে এরপরই সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এসএসকেএমে নিয়ে আসা হবে ফিরহাদকেও।
তবে এতসবের মাঝেও রাজনৈতিক মহলের অন্দরে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, অতিমারীর এই চরম পরিস্থিতিতে যেখানে বাংলা ধুকছে, সেখানে সিবিআইয়ের এই চরম পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল? পাশাপাশি, এতে করে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাতেও কাঁপছেন আবার কেউ কেউ।