Advertisment

আমফানে কলকাতায় ভেঙেছে পাঁচ হাজার গাছ, পরিবেশবিদদের কাঠগড়ায় অপরিকল্পিত নগরায়ন

আমফানে ধ্বংস হয়েছে সবুজ। গোটা কলকাতাজুড়ে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুই শতাব্দী প্রাচীন বট গাছেরও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আমফানে ধ্বংস হয়েছে সবুজ। গোটা কলকাতাজুড়ে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুই শতাব্দী প্রাচীন বট গাছেরও। কলকাতাজুড়ে এই সবুজ ধবংসের কারণ হিসাবে অপরিকল্পিত নগরায়নকেই দায়ী করা হচ্ছে। গত বুধবার কলকাতার উপর দিয়ে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৩০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে। তাতেই তছনছ হয়ে গিয়েছে মহানগর। গত চারদিন ধরে রাস্তায় পড়ে গাছেদের শব। পরিস্থিতি বাগে আনতে রাজ্য সরকারের অনুরোধে সেনা নেমেছে কলকাতার রাস্তায়। এত গাছের এই করুণ পরিণতির ফলে মহানগরের পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বে বলে মত পরিবেশবিদদের।

Advertisment

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়, 'কলকাতার মাত্রপ দুই শতাংশ সবুজ রয়েছে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ গাছ রয়েছে। তাই পাঁত হাজার গাছের ক্ষতি বা পড়ে যাওয়া খুব বড় বিষয় নয়। তবে, অনেক গাছই বহু পুরনো। শাখা-প্রশাখা মিলিয়ে এইসব গাছের বিস্তারও ছিল অনেকটা। ফলে অক্সিজেনের সঙ্গেই শহরের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ রোধে গাছগুলি সহায়তা করত। সেই পরিস্থিতি ফেরাতে গেলে এখন প্রায ১০-১৫ বছরের অপেক্ষা করতে হবে।'

আরও পড়ুন- মমতার ‘ধৈর্য্য’ প্রলেপেও অসন্তোষ মিটছে না নামখানা, কাকদ্বীপের দুর্গতদের

সুভাষ দত্ত বলেন, 'অরিকল্পিত নগরায়নয়ের জন্যও ঝড়ে এতগাছ উপড়ে গিয়েছে। কলকাতায় মাটির নিচে জল, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন লাইনের তার রয়েছে। তাই ফুটপাতের উপর গাছ পোঁতার সিদ্ধান্ত একেবারেই ভুল। এছাড়া কোন প্রজাতীর গাছ কোথায় বসানো হবে সেই পরিকল্পনাতেও ঘাটতি রয়েছে। গলির মধ্যে বট, অশ্বত্থের মত গাছ পোঁতা উচিত নয়। এছাড়া শহরের গাছ লাগানোর সময পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায রাখা হয় না। ফলে ভার বজায রাখতচে না পেরে ঝড় এলেই সব গাছ উপড়ে যায়।'

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বিখ্যাত। আয়লার পর আমফানে ফের ব্যাপক ক্ষতির মুখে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন যে, 'ঝড়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে ম্যানগ্রোভের। ফের সেখানে ম্যানগ্রোভ পোঁতা হবে। এই গাছই সুন্দরবনকে বাঁচাতে পারে।'

আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বোটানিক্যাল গার্ডেনের ২৭০ বছরের প্রাচীন বট গাছ। এর ৪০ শিকড় ও ৩০ ডাল খসে গিয়েছে। এই গাছ প্রায় ৪.৬৭ একরজুড়ে রয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের ডিরেক্টর কনক দাসের কথায়, 'ফণি ওবুলবুলেও এই গাছের খুব ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আমফানে বট গাছটির ভাল ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গার্ডেনের মধ্যে আরওবেশ কয়েটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতীর গাছও উপড়ে গিয়েছে। সেগুলিকে ফের রক্ষা করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে।'

আরও পড়ুন- আমফানের ধাক্কা সামলাতে পারবে কি ধুঁকতে থাকা বইপাড়া?

ভারতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন ডিরেক্টর হিমাদ্রী শেখর দেবনাথ বলেন, 'কলকাতায় বা দেশে গাছ কাটার কোনও পদ্ধতি নেই। বর্ষা বা সাইক্লোনের আগে যদি গাছ ছাঁটা হয় তবে ঝড়ে তার কম ক্ষতি হয়। কিন্তু, কলকাতায় পুজোর আগে এই কাজ হয়। এছাড়াও গাছের বড় রাস্তার দিকের অংশ ছাঁটা হয়। ফলে গাছ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ঝড় হলেই উপড়ে যায়।'

পরিবেশ সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যা বনানী কক্করের মতে, 'কোথায় কি গাছ পৌঁতা হচ্ছে সেটার পরিকল্পনা প্রয়োজন। গলির মধ্যে বট, অশ্বত্থ পুঁতলে বিপদ বাড়বে। উপড়ে পড়লে বাড়ি, গাড়ির ক্ষতি হবে। এগুলি পার্কে বা খোলা বড় জায়গায় লাগানোই ভাল।'

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kolkata amphan
Advertisment