ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রবল দাপট এখনও সামলে উঠতে পারে নি কলকাতা। তারই মধ্যে কলেজ স্ট্রিটের দোকানে দোকানে বৃষ্টির জল ঢুকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে ইতিমধ্যেই লকডাউনের জেরে ধুঁকতে থাকা বই ব্যবসার পরিস্থিতি। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধাইয়ের জন্য তৈরি ছাপা বই এবং বইয়ের পাতা। ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানা না গেলেও তা যে বহু লক্ষ টাকা, সেকথা জানাচ্ছেন এক আধিকারিক।
বই প্রকাশক এবং বিক্রেতাদের শীর্ষ সংগঠন খুব শিগগিরই বৈঠকে বসবে বলে খবর, তবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা ছাড়া গত্যন্তর নেই বলেই বোধ হচ্ছে। নচেৎ দুমাসের লকডাউনের ওপর ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সামলানো মুশকিল হবে কলকাতার বইপাড়ার পক্ষে।
আরও পড়ুন: লকডাউনের আঁধারে বাংলার বই প্রকাশনার দুনিয়া
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের শীর্ষস্থানীয় সদস্য তথা দেজ পাবলিশিং-এর কর্ণধার অপু দে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, "প্রকাশনা ইউনিট এবং দোকানের ভেতর জল জমে ছাপা বইয়ের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা। তার ওপর বই বাঁধাইয়ের ইউনিটে জল ঢুকে ছাপা বইয়ের পাতার যা ক্ষতি হয়েছে তা যদি যোগ করেন, তবে কোটির ঘরে পৌঁছে যাবে লোকসানের পরিমাণ।"
অপু দে আরও জানান, COVID-19 জনিত লকডাউনের ফলে নববর্ষের আগে থেকেই নতুন বই ছাপার কাজ ব্যাহত হয়েছিল, এবং ঘূর্ণিঝড় আমফান এসে আরও কঠিন করে দিয়ে গেছে কলেজ স্ট্রিটের পরিস্থিতি।
মোটামুটি কলেজ স্ট্রিটে ব্যবসা চালায় প্রায় ১০০ টি ছোটবড় প্রকাশনা সংস্থা, এবং ২০০-র বেশি দোকান। বৃহস্পতিবার জলমগ্ন রাস্তায় ভেসে বেড়াচ্ছে শয়ে শয়ে বই, এমন ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গিল্ড সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের গোটা দুনিয়াটা প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথম আক্রমণ ছিল COVID-19 এর, তারপর দুমাসের লকডাউন, তারপর আমফান! তালা দেওয়া দোকানের ভেতর হাজার হাজার বই নষ্ট হয়েছে।
একই চিত্র সুপ্রাচীন এবং জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা দেবসাহিত্য কুটিরেও, যেখানে বন্ধ শাটারের নীচ দিয়ে জল ঢোকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধাইয়ের জন্য রাখা হাজার হাজার ছাপা পাতা ছাড়াও অসংখ্য বই। কর্ণধার রূপা মজুমদার জানাচ্ছেন, "কত লোকসান হয়েছে, তা এক্ষুনি হিসেব করার অবস্থায় নেই আমরা। সামলে উঠতে অনেক মাস লাগবে।"
ফুটপাথের ওপর তাঁর দোকানের সামনে বসে ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক বই বিক্রেতা। চারপাশে ছড়ানো বৃষ্টির জলে ভিজে ন্যাতা হয়ে যাওয়া পাঠ্যবই। "আমি শেষ হয়ে গেলাম," অস্ফুটে শুধু এটুকুই বলতে পারলেন তিনি।
অপু দে আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেখতে কিছু প্রকাশক এবং দোকানী কলেজ স্ট্রিটে ছুটে এলেও জেলায় থাকেন যাঁরা, তাঁরা আসতে পারেন নি, যেহেতু লকডাউনের ফলে চলছে না লোকাল ট্রেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন