New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/rabindra-sarobar.jpg)
রবীন্দ্র সরোবরে চলছে পুনরায় রোপণের কাজ
গতকাল, শুক্রবার, শুরু হয়েছে এই পুনর্বাসনের কাজ, এবং ইতিমধ্যেই রবীন্দ্র সরোবরের তিনটি বড় গাছ ফের নিজেদের 'পায়ে' ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পেরেছে।
রবীন্দ্র সরোবরে চলছে পুনরায় রোপণের কাজ
গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবলীলার পর থেকে কলকাতা শহরের যেসব এলাকার ছবি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, শহরের দক্ষিণে রবীন্দ্র সরোবর চত্বর সম্ভবত তাদের অন্যতম। বছর দশেক আগে আরেক ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর ঢেলে সাজানো হয়েছিল যে সরোবর প্রাঙ্গণ, আমফানের দাপটে তা যেন আজ সবুজের এক ধ্বংসস্তুপ। ঝড়ে উপড়ে বা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে আন্দাজ ১৬০ টি গাছ, যদিও এখনও ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাপ সম্ভব হয় নি।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাঁচানো যাবে না একটি গাছকেও। এবং সেই তাগিদেই ১৬০ টি গাছের মধ্যে অন্তত অর্ধেককে 'রি-প্ল্যান্টিং' বা পুনরায় রোপণ করে তাদের বাঁচানোর প্রাণপণ লড়াই শুরু করেছেন দুই কলকাতাবাসী এবং তাঁদের সহযোগীরা। এই দুজন হলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী মুদর পাথেরিয়া, যাঁর সরোবরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের নিবিড় যোগাযোগ, এবং অর্জন বসু রায়, যিনি 'নেচারমেটস' নামক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার সদস্য তথা পরিবেশকর্মী।
এই প্রথমবার সরোবরের গাছ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামছেন না তাঁরা, যদিও এত বড় পরিসরে এর আগে কখনও কাজ করেন নি। ২০১৩ সাল থেকে সরোবরে ৪৩টি গাছ 'রি-প্ল্যান্ট' করেছেন তাঁরা, জানাচ্ছেন অর্জন। এছাড়াও কলকাতার অন্যান্য জায়গাতেও কিছু গাছ 'রি-প্ল্যান্ট' করেছেন তাঁরা, যেগুলি "এবারের ঝড়ও সামলে দিয়েছে"। তাঁদের আশা, এবার কলকাতার সাধারণ নাগরিকদেরও তাঁরা পাশে পাবেন এই কাজে।
আরও পড়ুন: ঝড়ের ঝাপটায় তছনছ ইকোপার্ক-নিউটাউন, উপড়ে যাওয়া হাজার খানেক গাছ পুনরায় রোপন
কীভাবে বাঁচানো যাবে এত গাছ? বৃক্ষ পুনঃ-রোপন না বলে পুনর্বাসন বলাই বাঞ্ছনীয়। গতকাল, শুক্রবার, শুরু হয়েছে এই পুনর্বাসনের কাজ, এবং ইতিমধ্যেই রবীন্দ্র সরোবরের তিনটি বড় গাছ ফের নিজেদের 'পায়ে' ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পেরেছে। আজ, শনিবার, যদি মেয়র ফিরহাদ হাকিম ছাড়পত্র দেন, তাহলে আশা, কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ-র কাছ থেকে পাওয়া যাবে কিছু যন্ত্রপাতি এবং লোকবল, যার সঙ্গে নিজেদের সরঞ্জাম এবং লোকলস্কর জুড়ে এই কাজ ত্বরান্বিত করতে চান মুদর এবং অর্জন।
"এত বিপুল হারে ধ্বংস হয়েছে গাছ, যে আমাদের মতে যত তাড়াতাড়ি কাজ হওয়া উচিত, ততটা একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা নির্দেশিকা মেনে যদি কাজ করি, এবং সরকারি প্রচেষ্টাকে সাহায্য করি, তবে আরও দ্রুত কাজ এগোবে," বলছেন মুদর। "সরঞ্জাম কেনার টাকা আপাতত নেই, কাজেই ভাড়া করতে হবে। সঙ্গে লোকবলও ভাড়া করব।"
এই কাজের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, তা কোথা থেকে আসবে? প্রাথমিক ভাবে মুদর এবং তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়ে এগিয়ে আসা কিছু নাগরিকদের টাকাকে 'সিড ক্যাপিটাল' বা বীজ মূলধন হিসেবে ব্যবহার করবেন মুদর এবং অর্জন। তারপরের অর্থের যোগান দেবেন সর্বসাধারণ, এমনটাই পরিকল্পনা। "আমি টাকা দিয়ে যেতে পারি, কিন্তু আরও অনেককে এর সঙ্গে যুক্ত করাটা জরুরি। দশ বছর আগে সরোবরের পুনর্জীবন হওয়ার পর থেকে অসংখ্য মানুষ এর সঙ্গে ইমোশনালি জড়িয়ে পড়েছেন। এই দশ বছরে এত বড় সঙ্কট আসে নি এখানে।"
ইতিমধ্যেই রবীন্দ্র সরোবরের গাছ পুনর্বাসনে সাহায্য করতে আগ্রহী অজস্র মানুষ যোগাযোগ করেছেন মুদরের সঙ্গে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ফলে কাউকেই এই কাজে সহজে সামিল করা যাচ্ছে না। সুতরাং পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক, অর্জন ও তাঁর ছোটখাটো দল, এবং জেসিবি ও হাইড্রা ক্রেন-এর চালকদের নিয়েই আপাতত কাজ। ফলে সাহায্য করতে যাঁরা ইচ্ছুক, তাঁদের পক্ষে অর্থসাহায্য করাই এই মুহূর্তে প্রকৃষ্টতম উপায়।
ঠিক কতটা অর্থসাহায্য প্রয়োজন? হাইড্রা ক্রেন-এর ভাড়া দৈনিক ৭,৮০০ টাকা, সঙ্গে মজুরি জন পিছু ৫৫০ টাকা, এবং প্রয়োজন দিনে অন্তত দশজন মজুর, দ্রুত জবাব মুদরের। প্রায় ১২ হাজার টাকায় যদি অন্তত দিনে সাত থেকে আটটি গাছের পুনর্বাসন না করা যায়, তবে খরচ বৃথা যাবে। ছক কষে কাজে নামতে তাই সরোবরের গাছগুলির গণনা করেছেন অর্জন। যার ভিত্তিতে গাছ ভাগ করা হয়েছে এ, বি, এবং সি ক্যাটেগরিতে। আপাতত সি ক্যাটেগরির গাছগুলিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁরা।
সব মিলিয়ে ১০০টি গাছকে পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত করেছেন মুদর ও অর্জন, তবে ৮০টি হলেও তাঁরা খুশি। "এই মুহূর্তে আন্দাজ তিন লক্ষ টাকা হলেই আমরা ৩০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে পারব। এবং এই ৩০ দিনে সব ঠিকঠাক চললে আমরা ৫০টি গাছ দাঁড় করিয়ে দিতে পারব," বলছেন মুদর, যদিও তাঁর ধারণা, পুরোদমে কাজ করলে দিনে সাত থেকে আটটি গাছ পর্যন্ত পুনর্বাসন করতে পারবেন তাঁরা।
পাশাপাশি অর্জন জানাচ্ছেন, যেহেতু অনির্দিষ্টকাল গাছগুলি ফেলে রাখার উপায় নেই, তাই আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চান। তাঁর কথায়, "আমরা যে প্রক্রিয়ায় কাজ করি, তা হলো গাছের 'হেড লোড', অর্থাৎ মাটির উপরের অংশটার ওজন কমিয়ে দিই কেটেছেঁটে। যে ১০০ টা গাছ আমরা বেছেছি, তাদের মধ্যে যদি ৭৫ টাও বেঁচে যায়, তবে সেগুলো দীর্ঘদিন থাকবে।"
আজ মেয়র এবং বন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তাঁরা। "আমরা আশাবাদী যে আমরা এটা করে ফেলব," বলছেন অর্জন। মুদরের কথায়, "এটা স্রেফ গাছ বাঁচানো নয়, এ হলো কলকাতার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন