দাদাদের করসেবা আজ সার্থক হল। রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এ কথাই বলছেন রাম ও শরদের বোন পূর্ণিমা কোঠারি। অযোধ্যায় করসেবা করতে গিয়ে ২৭ বছর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল কলকাতার ছেলে রাম ও শারদের। শুক্রবার অযোধ্যা মামলার ঐতিহাসিক সুপ্রিম রায়ের দিন তাঁদের বাড়িতেই উপস্থিত হলেন বঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। কৈলাশকে কাছে পেয়ে সেদিনের কাহিনি শোনালেন রাম ও শরদের সঙ্গী দীনেশ কুমার রাঠোরিয়া।
২৭ বছর আগে রাম, শারদ, রাজেশ ও দীনেশরা তখন তরতাজা যুবক। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের করসেবার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন অযোধ্যায়। সেখানেই ২ নভেম্বর নিরাপত্তাকর্মীর গুলিতে মৃত্যু হয় রাম ও শারদ কোঠারার। মৃত্যুকালে রামের বয়স ২৩, আর তাঁর ভাই শরদের ২০ বছর বয়স।
পূর্ণিমা কোঠারীর বাড়িতে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়র্গীয়। ছবি- জয়প্রকাশ দাস
সেই ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আজ মধ্যবয়সী দিনেশ বলেন, "১৯৯২-এর ২২ অক্টোবর আমরা বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। ৯০ জনের করসেবক দলের সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছিলাম অযোধ্যার উদ্দেশে। সেদিন কালকা মেইল বাতিল হয়েছিল। পরে অন্য় কোনও ট্রেনে আমরা বেনারস পৌঁছলাম। তারপর বেনারসে একটি স্কুলে আশ্রয় নিই। সেখান থেকে কোনওরকমে ট্রেকারে করে ফুরফুর গ্রামে যাই। ওই গ্রামে একটি হাসপাতালে রাত কাটাই। অযোধ্যায় কোনও যোগাযোগ ছিল না আমাদের। শুনেছিলাম, নানা জায়গায় করসেবকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফের ট্রেকারে করে ৩০ অক্টোবর আমরা অযোধ্যা পৌঁছই। সেখানে ছিলাম মণিরাম ছাউনিতে। এরপরের দিন ভিড় ঠেলে আমরা রামমন্দিরে ঢুকে পড়ি। রাম ও শরদ, দুই ভাই মন্দিদের উপর চড়ে যায়। কোনও গেরুয়া পতাকা আমাদের কাছে ছিল না। গেরুয়া রঙের তোয়ালে মন্দিরের উপর টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ওই পাথর খুব শক্ত ছিল, ভাঙা সহজ ছিল না।"
কীভাবে মৃত্য়ু হল দুই করসেবকের? দিনেশবাবু বলেন, "বিপত্তি ঘটে ২ নভেম্বর। সেদিন আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই অংশ নিই। মন্দির থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে আমাদের আটকে দেওয়া হয়। সেখানে ঘোড়সওয়ার পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভিড় হঠাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তারপর আমরা শুনতে পাই, রাবার বুলেট চলবে। ভেবেছিলাম, তাতে আর কী আঘাত লাগবে! মৃত্যু তো হবে না। ঘটল বিপরীত ঘটনা। আমরা একে অপরের থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। তখনই পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জে মাথায় গুলি লাগে রামের। ভাই শরদ তখন ছুটে যায় দাদার কাছে। তাঁরও গুলি লাগে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এই গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু'জনের।"
২০১৬ সালে মৃত্যু হয় রাম ও শরদের বাবা হরিলাল কোঠারির। এর পাঁচ বছর আগে মা সুমিত্রা কোঠারিরও মৃত্যু হয়। আগে কোঠারি পরিবার থাকত হাওড়ার বালিতে। তবে, এখন রাম ও শরদের বোন থাকেন উত্তর কলকাতায় মাহেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের গলিতে। সেখানে দুই ঘরেই টাঙানো রয়েছে রাম ও শরদের ছবি। সেই ছবির নীচে বসেই পূর্ণিমা কোঠারি বলেন, "আমি খুব খুশি। দাদাদের সেদিনের বলিদান সার্থক হয়েছে। ওঁরা রামমন্দির নির্মাণের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই মন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে। বাবা-মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন।"