অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোল রাজ্যপালের গাড়ি। রাজ্যপালের গাড়িতেই ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন বাবুল।
এদিকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়াকে সমালোচনা করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দলের মহাসচিব বিবৃতি দিয়ে জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আটকে থাকার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় তাঁকে যাদবপুরে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু , তা শোনেননি তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল পৌঁছতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূলের দাবি, সরকারকে না জানিয়ে বিজেপিকে সাহায্য করতেই সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo Heckled Case Live: ‘বাবুলের হামলাকারীদের রাস্তায় ফেলে পেটানো হবে’
রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত অরাজক পরিস্থিতি চলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। অগ্নিগর্ভ অবস্থা সৃষ্টি হয় চার নম্বর গেটে। এখানেই ভাঙচুর করা হয় ইউনিয়ন রুম, দেওয়ালে লাল রঙ দিয়ে লিখে দেওয়া হয়, 'ABVP'। এবিভিপি এবং দুর্গাবাহিনীর নেতৃত্বে এই ভাঙচুর চলে বলে খবর। দিকে দিকে জ্বলতে থাকে আগুন। ক্যাম্পাসের ভিতরে রাজ্যপালের গাড়িতে বসে থাকেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের গাড়ি আটকে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। বাবুলকে কার্যত 'উদ্ধার' করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন রাজ্যপাল। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, বাবুল সুপ্রিয়কে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে, শেষ পর্যন্ত ক্ষমা না চেয়েই, রাজ্যপালের গাড়িতে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান বাবুল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোল রাজ্যপালের গাড়ি। রাজ্যপালের গাড়িতেই ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।https://t.co/WtgETOxky7#JadavpurUniversity #BabulSupriyo pic.twitter.com/UUILUenDpO
— IE Bangla (@ieBangla) September 19, 2019
বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ প্রবেশ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজ্যপালের সঙ্গে এসেছিল তাঁর নিরাপত্তা বাহিনী।
বাবুল সুপ্রিয় 'নিগ্রহকাণ্ডে' এদিন দুপুর থেকেই রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবিভিপির সদস্যরা। এর আঁচ পড়েছে সংলগ্ন রাস্তাঘাটে। এদিন দুপুর দুটো পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে রাত আটটা দশ মিনিট পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে রাজভবন থেকে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যবস্থার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল। পরে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তিনি সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন বাবুলকে 'উদ্ধার' করতে।
এদিকে বাবুল সুপ্রিয় বারবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা হয়ে আসার পর অবিলম্বে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামলানো উচিত। এরপর যদি আরও বড় রকমের বিশৃঙ্খলা ঘটে যায়, তাহলে সেই ঘটনার দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ওপর বর্তাবে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। যাদবপুরের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর আচরণ সম্পর্কে আসানসোলের সাংসদ বলেন, "এঁদের রাস্টিকেট এবং আটক করা উচিত"। তিনি বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের "প্ররোচনাতে" পা দেবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে এদিনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ। ওদিকে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগ, রাজ্যপাল চেষ্টা করলে এই বিশৃঙ্খলা গোড়াতেই আটকাতে পারতেন।
পাঁচ ঘন্টা অবরুদ্ধ কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।#BabulSupriyo #JadavpurUniversity pic.twitter.com/vWwquH7dFm
— IE Bangla (@ieBangla) September 19, 2019
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার হেনস্থার মুখে পড়তে হয় বাবুল সুপ্রিয়কে, এমনটাই অভিযোগ। এদিন এবিভিপি'র একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন আসানসোলের সাংসদ। জানা যাচ্ছে, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করতে বাধা দেন উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উদ্দেশে 'গো ব্যাক' স্লোগানও দিতে শোনা যায় ছাত্রছাত্রীদের। এদিনের ধাক্কাধাক্কিতে বাবুল সুপ্রিয় মাটিতে পড়ে যান বলে অভিযোগ। তাঁকে চড়, ঘুষি, কিল মেরে চশমাও খুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বাবুলের।
আরও পড়ুন: LIVE: রাজীব কুমার মামলার শুনানি শেষ, উঠল দাউদ ইব্রাহিম প্রসঙ্গ
শুধু বাবুল সুপ্রিয়ই নয়, বিক্ষোভের মুখে পড়েন ফ্যাশন ডিজাইনার তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। এবিভিপির নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সংগঠকদের দাবি, একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই বাবুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসা মন্ত্রীকে প্রথমেই ধাক্কাধাক্কির সম্মুখীন হতে হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং পরিস্থতি রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান থেকে বেরোনোর সময়ও দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন বাবুল সুপ্রিয়। অবিলম্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশকে আর্জি জানান বাবুল। তাঁকে ফোনে বলতে শোনা যায়, "সন্ধে হওয়ার আগে ঝামেলা শেষ করুন"। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী।
বাবুল সুপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরোনোর জন্য উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে পুলিশ ডাকার প্রস্তাব দেন। তখন উপাচার্য বলেন, "প্রয়োজনে পদত্যাগ করব, কিন্তু পুলিশ ডাকতে পারব না"। পরিস্থিতি তাঁর হাতের বাইরে বলে জানান উপাচার্য।
West Bengal: Heavy security deployed outside Jadhavpur University in Kolkata, where Union Minister Babul Supriyo faced protest by Students' Federation of India (SFI) and AISA (All India Students Assn) who were opposing his visit to campus. He was there to attend an event of ABVP. pic.twitter.com/9YttqHexYN
— ANI (@ANI) September 19, 2019
আরও পড়ুন: LIVE: রাজীব কুমারের খোঁজে রান্নাঘরে সিবিআই
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "আমরা তাঁর যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিয়েছিলাম। উনি ইচ্ছাকৃতভাবে ওই ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে নাটক করছেন। আমরা তাঁর গায়ে হাত তুলি নি। বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের অভিযোগ বিজেপির নীতি ও কাজের বিরুদ্ধে। ওদের মানুষ খুনের বিরুদ্ধে।"
যাদবপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে খোদ উপাচার্য এসে হাজির হন ঘটনাস্থলে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। উপাচার্যকেও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "কেউ কোনো অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবেন না, আমাদের সংগঠন এসবের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর গায়ে হাত দেওয়া ঠিক নয়। কারা হাত দিয়েছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি রাখছি।"