যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উপর হামলাকারীকে চিহ্নিত করলেন বাবুল সুপ্রিয়। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের মুখে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, এ সময় তাঁর চুল ধরে টানা হয় এবং চড়, ঘুঁষি মেরে জামাও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এদিকে, বাবুলের চুল ধরে টানছে এক যুবক, এমন ছবিও ধরা পড়েছে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায়। সেই ছবির সাহায্যেই এবার অভিযুক্তকে ফেসবুক থেকে খুঁজে বের করলেন বাবুল সুপ্রিয়।
আসানসোলের সাংসদ জানিয়েছেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেবাঞ্জন ওরফে পিকু নামের ছেলেটি আমাকে নিগ্রহ করেছে। আমরা তাঁকে চিহ্নিত করেছি। আমরা এই ছেলেটিকে খুঁজে বের করব। এরপর দেখতে চাই 'নিগ্রহে'র জন্য মমতা সরকার কী পদক্ষেপ করে?
যাদবপুরে মন্ত্রীর সঙ্গে মারমুখী ছেলের ছবি দেখে আতঙ্কিত দেবাঞ্জনের মা। পরিণতি যে ভয়হ্কর হতে পারে তা আন্দাজ করতে পারচ্ছেন তিনি। ছেলের কাজে লজ্জিত হয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। মায়ের আর্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের কথাভেবে ছেলের অপরাধ যেন ক্ষমা করে দেন বাবুল সুপ্রিয়।
আরও পড়ুন: Live: ‘বাবুলের হামলাকারীদের রাস্তায় ফেলে পেটানো হবে’
এ প্রসঙ্গে যাদবপুরের পড়ুয়া তথা এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথ ও সোমাশ্রী চৌধুরি বলেন, "বাবুল সুপ্রিয়র চিহ্নিত করা দেবাঞ্জন নামের ছেলেটিকে আমরা চিনি না"। বাবুল সুপ্রিয় অভিযুক্তের ফেসবুক প্রফাইলের স্ক্রিন শট টুইট করেছেন। কিন্তু, ফেসবুক প্রোফাইলের ওই স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, দেবাঞ্জন সংস্কৃত কলেজের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র এবং একইসঙ্গে ইউনাইটেড স্টুডেন্ট ডেমোক্রোটিক ফ্রন্টের সদস্য।"
This is the guy who led the assault in #JadavpurUniversity .. we will find him out and then see what @MamataOfficial does to him in terms of charging him for assault without ANY PROVOCATION whatsoever from our/my side@CPKolkata @BJP4Bengal @ABVPVoice @BJYM pic.twitter.com/RzImVk7r5C
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) September 20, 2019
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার অবরোধ ও হেনস্থার মুখে পড়তে হয় বাবুল সুপ্রিয়কে। এবিভিপি’র একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত ছিলেন আসানসোলের সাংসদ। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করতেই বাবুলকে বাধা দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দিতে শোনা যায় ছাত্রছাত্রীদের। এরপরই ধাক্কাধাক্কিতে বাবুল সুপ্রিয় মাটিতে পড়ে যান বলে অভিযোগ। তাঁকে চড়, ঘুষি, কিল মেরে চশমাও খুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বাবুলের। এরপর খোদ রাজ্যপাল এসে বাবুলকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর দরজার সামনে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখায় ও ভাঙচুর চালায় এবিভিপি-দুর্গা বাহিনী।
বাবুলকাণ্ডে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে বিবৃতিও জারি করেছে রাজভবন। ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধানকড় মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ফোন করেন। মমতা তাঁকে যাদবপুরে যেতে নিষেধ করেন। তখন রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, তিনি ততক্ষণে বাবুলকে উদ্ধার করতে বেরিয়ে পড়েছেন। এদিকে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকতে অস্বীকার করেন বলেও খবর। বাবুলের অভিযোগ, উপাচার্য প্রথমেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পরিস্থিতি আগেই শান্ত হয়ে যেত। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন যাদবপুরের উপাচার্য এবং সহউপাচার্য।
আরও পড়ুন: রাজীব কুমারের বাড়িতে ফের সিবিআই
এদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ‘চরম হেনস্থা’র ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন দিলীপ ঘোষ। সূত্রের খবর, চিঠিতে দিলীপ লিখেছেন, ‘‘যে কাজ পুলিশের করা উচিত ছিল, সে কাজ রাজ্যপালকে করতে হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’’। জানা যাচ্ছে, যাদবপুরে বাবুল সুপ্রিয়কে ‘নিগ্রহে’র ঘটনায় অমিত শাহের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছেন দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় শুক্রবারও রীতিমতো উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।