Advertisment

আগুনের গ্রাসে সাজানো সংসার, শূন্য থেকে শুরু করছেন তন্ময়, দেবু, ঝন্টুরা

তাঁর স্বপ্নের ঘর এখন আগুনের গ্রাসে ধংসস্তুপে পরিণত। ৪৫ বছরের ঝন্টু চোখের জল কোনও বাঁধ মানছে না। কী খুঁজছেন, কেন খুঁজছেন সেই জবাবও তাঁর কাছে নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পুড়ে গিয়েছে সাজানো সংসার

তখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। সকাল থেকে এক নাগাড়ে মেঝের ওপর পোড়া দলামোচা কালচে স্তুপ খুঁড়ে চলেছে ঝন্টু। কিছু যদি উদ্ধার হয়। পুরে সব খাক হয়ে গিয়েছে। তাঁর স্বপ্নের ঘর এখন আগুনের গ্রাসে ধংসস্তুপে পরিণত। ৪৫ বছরের ঝন্টু চোখের জল কোনও বাঁধ মানছে না। কী খুঁজছেন, কেন খুঁজছেন সেই জবাবও তাঁর কাছে নেই। একই অবস্থা বাগবাজারের বস্তির ১০৮ ঘর বাসিন্দার। আগুনের গ্রাসে আজ তাঁরা সবাই নিঃস্ব।

Advertisment

ঝন্টুর দিন প্রতি রোজগার ৩০০ টাকা। মুরগির মাংসের দোকানে কাজ করেন। স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। দুজনের ঘাম ঝড়ানো রোজগার। তা দিয়েই চলে সংসারের লড়াই। ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা। কিন্তু আগুনের গ্রাস তা মানল কোথায়? হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই ঝন্টু বলেন, "সব শেষ। শূন্য থেকে আবার শুরু করতে হবে। কী হবে কে জানে। সকাল থেকে খুঁজেই চলেছি। কিছুই পাচ্ছি না।" ঝন্টুর ছেলে পাপন দাস নবম শ্রেণির ছাত্র, মেয়ে ষষ্ঠ শ্রণির ছাত্রী। আগুন লাগার সময় ছেলে ঘরে বসে সবে মুখে গ্রাস তুলতে যাচ্ছিল। আতঙ্কে সবাই খাওয়া ফেলেই বেরিয়ে আসলাম", এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন সব হারানো বাবা।

publive-image

একই অবস্থা সন্দেশখালির আতাপুরের বছর পয়ষট্টির দুলাল দাসের। টিভিতে আগুনের খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। ভোর হতেই বেরিয়ে পড়েন কলকাতার উদ্দেশ্যে। বাগবাজারের বস্তিতে নিজের ঘর দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। কী করবেন তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দুলাল দাস বলেন, "রান্নার জোগাড়ের কাজ করি। তবে মাসে সরকারি বৃদ্ধ ভাতা পাই। কোনওরকমে সংসার চলে যায়। যাক মানুষগুলোতো বেঁচে গিয়েছে। নতুন করে শুরু করতে হবে।" ঘরে ঠাকুর রাখার জায়গার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন দুলালবাবু। তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ-হনুমানজীরা। বাঁচাতে পারলেন কই?

অন্যদিকে, চিৎপুরে রঙের কারখানায় কাজ করেন দেবু ভুঁইয়া। আগুন লাগার খবর পেয়েই ছুটে এসেছেন। তার মধ্যেই সব পুড়ে ছারখার। ঘরে রাখা টাকা-পয়সা তো ছাই হয়ে গিয়েছে, সোনা-রুপো সব তালগোল কোথায় রয়েছে তা খুঁজে পাওয়ার কোনও উপায় নেই, জানালেন দেবু। দেবুর মা রেখা ভুঁইয়া বলেন, "মনকে বোঝানো যাচ্ছে না। এখানে আমরা ৬০ বছরের ওপর আছি। টাকা, দরকারি কাগজ সব ছাই হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এসে দেখে গিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন। এখন সরকারি সাহায্যের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।" তন্ময় দাস খবর পেয়ে এসে দেখেছেন পুরো বস্তি দাউ দাউ করে জ্বলছে।

publive-image

বস্তিতে প্রকৃত আগুন লাগার কারণ এখনও অধরা। বিরোধী দলের নেতৃত্বের আগুন লাগার কারণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বস্তিবাসীদের একাংশও সন্দিহান। বস্তির প্রতি ঘরে ঘরে হাহাকার। পড়নের এক পোশাক ছাড়া তাঁদের আর কোনও সম্বল নেই। আপাতত সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে। ঘিঞ্জি এই বস্তিতে ছোট ছোট দোতলা, তিনতলাও ছিল। ঘরের দেওয়ালে ইঁট দিয়ে ওপরে ওঠার সিঁড়িও বানিয়ে নিয়েছিলেন। সেসব ঘরের কোন অস্তিত্বই নেই। এখন আবার প্রথম থেকে জীবনযুদ্ধের লড়াই শুরু তন্ময়, দেবু, ঝন্টুদের।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Bagbazar Fire
Advertisment