সোমবার রাতে চূড়ান্ত নাটকীয়তার পর নারদ মামলায় (Narada Scam) কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) -সহ রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে ২ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। নিজাম প্যালেসের বাইরে তখন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের তুমুল বিক্ষোভ। সকান থেকেই একপ্রকার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সংশ্লিষ্ট চত্বর। তাই জুঁকি না নিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই চারজনকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। পিছন পিছন সেখানে যান বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Baishakhi Banerjee)। সেখানেই জেলের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। একটাই আবেদন, "শোভনের সঙ্গে একটু দেখা করতে দিন। ওষুধটুকু অন্তত খেতে দিন। ওঁর হাই সুগার।" প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) গেট চাপড়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলেই চলেন শোভনের বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী।
জেলের দরজা ধরে অনেকক্ষণ ধাক্কা মারতে দেখা যায় তাঁকে। এরপর গেট ধরে সেখানেই বসে পড়ে কান্নায় একপ্রকার লুটোপুটি খান বৈশাখী। চিৎকার করে বলতে থাকেন, "একবার দেখতে দিন। ওঁর হাই সুগার। তবুও কিছু খেতে দেওয়া হয়নি ওঁকে। অমানুষিক ব্যবহার করা হচ্ছে।" পাশাপাশি সকলের ঘটনার কথাও তাঁকে চড়া সুরেই বলতে শোনা যায়। চারদিকে তখন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভীড়। ছিলেন শোভনের ছেলেও। তার মাঝেই মাটিতে বসে বৈশাখী চিৎকার করে বলতে থাকেন, "আপনাদের কোনও লজ্জাশরম নেই। আগে থেকে না জানিয়ে এক মহিলার বেডরুমে চার জন পুরুষ ঢুকে এলেন ওঁকে ধরার জন্য। আর এখন বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।"
প্রসঙ্গত, জেলে যাওয়ার পর ভোর রাতেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মদন মিত্র। তড়িঘড়ি তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে উডবার্ন ওয়ার্ডের ১০৬ নম্বর ঘরে ভর্তি শোভন। শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার পাশেই ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। জানা গিয়েছে, দু'জনেই অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছে।
শোভনের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বৈশাখী বলেন, রাতে শুধু চা বিস্কুট খেয়েছেন। তার আগে দীর্ঘ সময় সিবিআই দপ্তরে থাকার সময় তিনি কিছুই খাননি। তাই ইনস্যুলিনও নিতে পারেননি। যার জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভন। আজ সকালে প্রাতঃরাশও করেননি। বৈশাখী আরও জানান, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সিওপিডি-র সমস্যা আছে। তাই শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়।
গতকাল গ্রেপ্তার হওয়ার পরই স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় (Ratna Chatterjee) নিজাম প্যালেসে ছুটে এসেছিলেন শোভনের জন্য। তখন বৈশাখীকে দেখা না গেলও, বেলা গড়াতেই তিনিও উপস্থিত হন সেখানে। রাত অবধি সেখানেই ছিলেন। এরপর প্রেসিডেন্সি জেলের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই দুঃসময়ে স্ত্রী-বান্ধবী দু'জনেই শোভনবাবুর পাশে রয়েছেন।