স্কুল খুলছে বহুদিন পর। সেই নিয়ে প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। বিল্ডিং স্যানিটাইজেশন থেকে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে তৎপরতাও কম ছিল না। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আগে থেকেই বিদ্যালয়ের ঘর চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা নিয়ে বেশ নিদারুণ ভাবেই কাজ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রথম দিন স্কুল খোলার পর কেমন ছিল হাল হকিকত? ঘুরে দেখল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
Advertisment
শহর কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় মেয়েদের স্কুল, বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের বাইরের চিত্রই বলে দেবে এতদিন পর স্কুলে ফিরে ছাত্রীদের উচ্ছ্বাস ছিল সপ্তমে। প্রায় দেড় বছরের বিরতির পর চেনা ছন্দে ফিরেছে জীবন। সেই পোশাকের সঙ্গে আরেকবার পরিচিতির সুযোগ মিলেছে। মেন গেটের বাইরে একে একে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকার পরেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মেলে। নিজস্ব দূরত্ব এবং মুখে মাস্ক সকলের বিদ্যমান। ঢোকার মুখেই উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের দু-তিনজন শিক্ষিকা।
বেথুনে ঢোকার মুখে ছাত্রীরা
Advertisment
বন্ধুদের এতদিন পর দেখতে পেয়ে তাদের গল্পের যেমন শেষ নেই তেমনই নিয়ম বিধি মেনে রয়েছে পারস্পরিক দূরত্ব। গেটের সামনে তেমনই ভিড় করে রয়েছেন অভিভাবকরা। পুনরায় স্কুল খোলার প্রথম দিন একেবারেই মেয়েদের একলা ছাড়তে নারাজ তাঁরা। রাস্তার ওপারেও দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন। কর্তৃপক্ষের তৎপরতা রয়েছে প্রচুর। মেয়েদের দায়িত্ব এবং সুরক্ষা নিয়ে একেবারেই কোনও আপস নয়।
ছাত্রীদের কেউ কেউ জানান, তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন কবে স্কুল খুলবে। এতদিন ধরে বাড়ি বসে জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল। তারপরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দ তো রয়েছেই। স্কুলের ভেতরে পড়াশোনা না হলে অনেক কিছুই অধরা থেকে যায় বলেই মনে করেন তাঁরা। একাদশের এক ছাত্রী বলেন, "আর মাত্র একটা বছর, সামনের বছরের পর স্কুলে আসা আর হবে না। অনেক সময় নস্ট হয়েছে মহামারীতে। এবার একটু উপভোগ করার সময়। এইদিন আর ফিরে আসবে না।" শিক্ষিকাদের সঙ্গে প্রতিদিনের এক অটুট বন্ধন অবশ্যই মিস করবে বলেই জানিয়েছে সে।
বেথুনের সামনে অভিভাবকদের ভিড়
স্কুল খোলার প্রসঙ্গেই, অভিভাবকদের মতামত বেশ ইচিবাচক। তাঁরা বলেন, দরকার ছিল স্কুল খোলার। নয়তো শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া অল্পবয়সীদের শুরু হয়নি ঠিকই তবে স্কুলের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছেন তাঁরা। এক অভিভাবক বলেন, "যথেষ্ট সুরক্ষা মেনেই যে কাজ এবং পঠনপাঠন হবে সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।" নবম-দশমের ছাত্রীদের স্কুল থেকেও সম্ভবত দেওয়া হবে টিফিন। বাইরের খাবার খাওয়া চলবে না। তারপরেও বাবা মায়েদের তরফ থেকে ব্যাগেই মজুত করা হয়েছে টিফিন বক্স। অবশ্যই সঙ্গে থাকছে টিস্যু এবং স্যানিটাইজার। আরেকজন অভিভাবকের মতামত, "ওরা বিগত দুই বছর ধরে দেখছে সবকিছুই - এখন শুধু নিজেদের সুস্থ রাখতে হবে। বড় হয়েছে ওরা, আশা করা যাচ্ছে নিজেদের ভাল বুঝবে।" তবে ভিড় সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক শিক্ষিকারা। বাবা মায়েদের একসঙ্গে জড়ো হতে দেখেই জায়গা ফাঁকা করতে বলেন। একসঙ্গে এত মানুষ ভিড় করলে তাদের শিশুদেরই বিপত্তি বলে বার্তাও দেন তাদের।
তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্যের ঝলক মিলেছে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের সম্মুখে। ভিড় একটু কমই ছিল। একে একেই ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। জমায়েতের কোনও সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার। কেউ কেউ গ্লাভস পর্যন্ত রেখেছেন। স্কুল খুললেও একেবারেই বিধি মেনেই পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের সুযোগ রয়েছে সেটি পরিষ্কার দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়।
স্কটিশের সামনে অনুমতি নেই জমায়েতের
বিদ্যালয়ের সেই ছাত্র জানায়, তাদের প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ পঠন বিষয়ক কর্মসূচি নিরাপত্তা মেনেই তৈরি করেছেন। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছেলেদের জন্য আলাদা আলাদা সময়ে ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। এবং তাতে ছাত্র সংখ্যাও থাকছে কম। ফলেই বেশি ছাত্র একসঙ্গে জড়ো হওয়ার সুযোগ নেই। থিওরি এবং ব্যবহারিক উভয় বিষয়ের ওপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এমনকি খুবই অল্প সময়ের জন্যই থাকছে ক্লাসের আয়োজন, টিফিনের কোনও প্রশ্নই নেই।
ছাত্রদের সুরক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্তকে সত্যিই কুর্নিশ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে যে স্বাস্থ্য সমানভাবে প্রয়োজনীয় এমনই মতামত তাদের। দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বাবার বক্তব্য, "অনেকদিন নিয়ম থেকে দূরে ছিল ওরা, অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। অভ্যাসের বদল আনতে হবে। ফিরে যেতে হবে আগের সময়ে। তবে তাঁর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ভাবনাকে ধন্যবাদ, তিনি ছাত্রদের কথা চিন্তাও করেছেন।"
স্কুল শুরু হওয়ায় স্বস্তিতে অভিভাবক থেকে পড়ুয়ারা সকলেই। তারপরেও নিজেদের থাকতে হবে সতর্ক, অবলম্বন করতে হবে কোভিড বিধি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করতে হবে ওদের ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া। তবেই যেন আরও চিন্তামুক্ত হতে পারবেন অনেকেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন