শুক্রবার রাতে গাড়িতে পিষ্ট দুই বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার অভিযোগে শহরের প্রখ্যাত বিরিয়ানির দোকানের মালিকের পুত্র আরসালান পারভেজকে রবিবার ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। মধ্য কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি-লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে মার্সিডিজ গাড়িকে ধাক্কা এবং দুই বাংলাদেশি নাগরিককে খুনের অভিযোগে শনিবারই গ্রেফতার হয় আরসালানকে।
অভিযুক্ত বাইশ বছরের আরসালান পারভেজ প্রথমে পালিয়ে গেলেও পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফে জানা গেছে যে, দুর্ঘটনায় নিহত দুই বাংলাদেশি নাগরিকরা হলেন ঝিনাইদহের কাজি মহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) এবং ঢাকার বাসিন্দা ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। মহম্মদ মইনুল আলম কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর চোখের চিকিৎসার জন্য। তানিয়া কাজ করতেন ঢাকা সিটিব্যাঙ্কে। আরসালান চালিত জাগুয়ার গাড়িটি প্রথমে ধাক্কা মারে একটি মার্সেডিজকে। পরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে তিনজনকে পথচারীকে ধাক্কা মারে মার্সেডিজটি। এঁদের মধ্যে কাজি মহম্মদ শাফি রহমাতুল্লা (৩৬) প্রাণে বাঁচলেও কাজি মহম্মদ মইনুল আলম এবং ফারহানা ইসলাম তানিয়াকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন- মমতার হস্তক্ষেপ চেয়ে অনির্দিষ্টকালের ট্রাক ধর্মঘট, বাজার দর আগুন হওয়ার আশঙ্কা
রবিবারই আরসালানকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাঁর আইনজীবীরা আরসালানের জামিনের জন্য আবেদনও করেন। তবে চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট ইনচার্জ অলোকানন্দা রায় আরসালানের জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন এবং ২৯ অগাস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, আরসালানের পুলিশি হেফাজতের আর্জি করে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, আরসালান সেদিন যে শুধু দ্রুত গতিতে গাড়ি ছুটিয়েছিলেন তাই নয়, শেক্সপিয়র সরণি-লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ট্রাফিকও ভঙ্গ করেছেন।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ চ্যাটার্জি এবং স্নেহাংশু ঘোষ বলেন, এই মুহুর্তে সমস্ত ঘটনাটি তদন্তের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ওই দু'জনের মৃত্যুর কারণ এবং ঘটনাগুলিকে সঠিকভাবে পুনর্নির্মাণ করার জন্য আরসালানকে পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ খুবই জরুরি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো), ৪২৭ (মারাত্মক ক্ষতিসাধন), ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা) ধারায় আরসালান পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। তাই সমস্ত তথ্য প্রমাণের জন্য আরসালানের পুলিশি হেফাজতে থাকার গুরুত্ব আদালতের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
অন্যদিকে, আরসালান পারভেজের আইনজীবী দেবজ্যোতি সেনগুপ্ত আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে আরসালান মার্সেডিজ গাড়িটিকে ধাক্কা মারলেও তিনজন ব্যাক্তিকে সে কিছু করেনি। তিনি বলেন, "এটি একটি দুর্ঘটনা মাত্র। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করলে লন্ডনের এই ম্যানেজমেন্ট ছাত্র সমস্ত শর্তই মেনে চলতে প্রস্তুত"। অপরদিকে আরসালানের আইনজীবীর বক্তব্যর সূত্র ধরেই সরকারি পক্ষের আইনজীবী তাঁর সওয়ালে বলেন, ম্যানেজমেন্টের ছাত্র হিসেবে তাঁর গতিবিধি এবং ড্রাইভিং বিধি নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
আরও পড়ুন- রাজ্য জুড়ে আটচল্লিশ হাজার পার্শ্ব শিক্ষকের স্কুল বয়কট, সংকটে শিক্ষা ব্যবস্থা
অভিযুক্তের আইনজীবীর বক্তব্য, "আমার মক্কেলের গাড়ি সরাসরি নিহতদের আঘাত করেনি। প্রথমে সেটি একটি মার্সিডিজকে ধাক্কা মারে। পরবর্তীতে সেই মার্সিডিজ ওই তিনজনকে ধাক্কা মারে। সেদিনের যা আবহাওয়া ছিল তাতে গাড়ির চাকা হড়কে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। আমরা আদালতকে সেটাই জানিয়েছি"। অন্যদিকে, প্রাণে বেঁচে ফেরা রহমাতুল্লা বলেন, "আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমকে একা দেশে ফিরতে হবে। শুধু তাই নয় এই দুইজনের নিথর দেহ নিয়ে আমাকে ফিরতে হচ্ছে"। শনিবার রাতেই এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে মৃতদেহগুলিকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, মার্সিডিজে থাকা অমিত কাজারিয়া (৫০) এবং তাঁর স্ত্রী কণিকা (৪৪)-কে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে অমিত কাজারিয়ার কানে একটি অস্ত্রোপচার এবং প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। তবে সুস্থ আছেন তাঁর স্ত্রী, এমনটাই খবর।
Read the full story in English