সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা। তারপর ইংলিশে মাস্টার্স। তাও চাকরি নিয়েছিলেন দমকল বিভাগে। মৃত্যুর পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়তেন আগুন নেভাতে। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখাই প্রাণ কেড়ে নেবে তা কে জানত। স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে বিধ্বংসী আগুনে মৃত ৯ জনের মধ্যে ছিলেন দমকলকর্মী অনিরুদ্ধ জানা। ২৯ বছরের তরতাজা যুবক এমন অকালে চলে যাবেন ভাবতেই পারছেন না পরিজনরা। বাবা মোহনলাল জানা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। কিন্তু ছেলের মৃত্যুতে রেল এবং রাজ্য প্রশাসন- দুইকেই দুষছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাবুর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না মোহনবাবু। বলেছেন, "যখনই এধরনের কোনও দুর্ঘটনা হয়, সব কর্তৃপক্ষই নিজেদের দোষ ঢেকে অন্যের উপর দোষারোপ করে। কেন বহুতলে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই, কেউ বলতে পারবে? দ্বিতীয়ত, কেন সরকার সময়ে সময়ে সেগুলো দেখে না? রাজ্য এবং রেল দফতর- দুইয়েরই দোষ রয়েছে। আমার ছেলে কি আর ফিরবে? যাঁদের পরিজন হারায় তাঁরাই যন্ত্রণা বোঝে। বাকিদের কিছু যায় আসে না।" এদিন ছেলের কথা ভেবে শোকে পাথর হয়ে যান মোহনবাবু।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই অমিত ভাওয়ালের। মঙ্গলবার লালবাজারে মৃত পুলিশকর্মীকে গান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধা জানায় কলকাতা পুলিশ। থানার বড়বাবু দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, "অমিত বেশ পরিশ্রমী ছেলে ছিল। গত তিন বছর ধরে এই থানাতেই পোস্টিং ছিল তাঁর। এলাকার সবাই চিনত ওঁকে। ওঁর মৃত্যু সত্যিই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।"
স্ট্র্যান্ড রোডের রেলভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করল হেয়ার স্ট্রিট থানা। গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে পুলিশের। দমকল আইনের ৩০৪-এ, ১১-এল ও ১১-জে ধারায় মামলা রুজু করেছে লালবাজার। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেছে ফরেন্সিক দল। রেলের তরফে তদন্তের জন্য গঠন হয়েছে চার সদস্যের কমিটি। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দা বিভাগের ৭ আধিকারিক। সোমবারের কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বারে বারেই সামনে আসছে ভবনের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিষয়টি।