প্রায় ২ ঘণ্টা শুনানির পরেও হাইকোর্টে অধরা নারদ মামলা অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত। চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর অন্তর্বর্তী জামিনের পর আজ ফের হাইকোর্টে শুনানি হয় এই মামলার। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে সিবিআইয়ের মামলা স্থানান্তর নিয়ে আবেদনের শুনানি শুরু হয় দুপুর দুটোয়। বিকেল চারটে নাগাদ আজকের মতো শুনানি শেষ হয়। কাল সকাল ১১.৩০টায় ফের নারদকাণ্ডে হাইকোর্টে শুনানি হবে। এমনতাই আদালত সূত্রে খবর।
এদিন শুরুতেই বৃহত্তর বেঞ্চের স্থানান্তর-সংক্রান্ত মামলা শোনার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তিনি বলেন, ‘এই মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই বৃহত্তর বেঞ্চের। স্থানান্তরের মামলার শুনানি হয় সিঙ্গল বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা বৃহত্তর বেঞ্চে থাকতে পারেন না।’ তখন অ্যাডভোকেট জেনারেলকে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘২ বিচারপতির সহমতের ভিত্তিতেই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠিত হয়েছে। তাহলে বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানিতে অসুবিধা কোথায়?’
সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, ‘হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ মামলা বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টে বলেছিল রাজ্য।’ কিশোর দত্তকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি ট্যান্ডনের মন্তব্য, ‘এখন আমাদের মামলা শুনতে দিন। যখন রায়দান হবে, তখন আপনার মতামত নেব। আপনার মতামত নিয়ে আমরা অবস্থান স্পষ্ট করব।’
এদিকে, ১৭ মে সকালে আচমকাই চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। পাঁচ বছর আগের নারদ-মামলায় একসঙ্গে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারি সাড়া ফেলে দেয় রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু, তারপর এই বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই একের পর এক নতুন বাঁক নেয়।
১৭ মে সন্ধেতেই চার হেভিওয়েটকে জামিন দেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছে যায় সিবিআই। রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে দেয়। ফলে জেল হেফাজতে যেতে হয় চার হেভিওয়েটকে।
২১ মে চার হেভিওয়েটের জামিন-মামলার শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতভেদ তৈরি হয়।
শেষমেশ চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিভিশন বেঞ্চে দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায়, মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। গত সোমবার পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার প্রথম শুনানি ছিল।
কিন্তু, তার আগে চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় সিবিআই। সেই আবেদনে কিছু ত্রুটি থাকায় পরদিন, ফের নতুন করে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খায় সিবিআই। চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলেও, সেখানে বিচারপতিদের একের পর এক কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
এরপরই হাইকোর্টে মামলা ফেরত পাঠানোর পক্ষে সায় দেন সলিসিটর জেনারেল। নিজেরা মামলা করে, নিজেরাই সেই মামলা প্রত্যাহার করে তারা। ফলে মামলা আবার ফিরে আসে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। শুক্রবার সেই বেঞ্চই চার হেভিওয়েটের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে।