গানওয়ালার অনুষ্ঠানে ছন্দপতন। এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন বিতর্কে জ্বলে উঠল কবীর সুমনের রবিবাসরীয় একক অনুষ্ঠানের সান্ধ্য আসর। পরিস্থিতি এমনই হল যে অনুষ্ঠান চলাকালীন একাধিকবার উত্তেজিত শ্রোতাদের সামাল দিতে ছুটে আসতে হল পুলিশকেও।
কবীরের সঙ্গীত এবং উচ্চারণে সমকাল ধরা দেয় বারবার। মঞ্চের অনুষ্ঠানও এর ব্যতিক্রম নয়। রবিবারের 'শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই' অনুষ্ঠানেও অন্যথা হয়নি এই ধারার। 'বরাবরের মতোই' এদিনও অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই বিজেপি বিরোধী সুর চড়িয়েছিলেন সুমন। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুমন সোচ্চার হয়েছিলেন গানে এবং আলাপচারিতায়।
আরও পড়ুন, আমি চাই: মমতা-কানহাইয়া প্রধানমন্ত্রী হোন, জিতুক নকশালরাও
এ পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এরপর এ বিষয়ে কথা বলতে বলতেই উপস্থিত শ্রোতাদের তিনি এই সময়ে ও এই ইস্যুতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান। সুমন একথা বলতেই দর্শকাসন থেকে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, "এসব শুনতে আসিনি, গান শুনতে এসেছি"। প্রত্যুত্তরে কবীরকেও মঞ্চ থেকে বলতে শোনা যায়, "বেশ করেছি, বলেছি"। দর্শকদের মধ্যে বিবাদ বাড়তে শুরু করলে শিল্পী নিজেই সবাইকে শান্ত হওয়ার আর্জি জানান। অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধের সুর কাটতে শুরু করে তখনই।
আরও পড়ুন, মমতার মঞ্চে ওরা থাকলে আমি আর যাব না
বিরতিতে ফের শুরু হয় বাদানুবাদ। সুমন তাঁর গানের অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছেন, উপস্থিত দর্শক এবং শ্রোতাদের একাংশের অভিযোগ ছিল এমনই। আবার 'এটাই সময়ের দাবি', এরকম পাল্টা যুক্তিও ছিল উপস্থিত অনেক শ্রোতারই। বিরতিতে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামাল দিতে এগিয়ে আসে পুলিশ। ঘোষণা করা হয়, ব্যক্তিগতভাবে সমস্যা থাকলে শ্রোতা এবং দর্শক যেন অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান। দ্বিতিয়ার্ধে মঞ্চে এসে কবীর সুমন বলেন, "শুনতে পেলাম, কারোর কারোর খুব অসুবিধে হচ্ছে, এত অসুবিধে কীসের বলুন তো"। তবে এরপর আর তেমন 'অসুবিধা' হয়নি, মোটের উপর সুরে সুরেই কেটে গিয়েছে সময়।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে কবীর সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি রাজনৈতিক কথা বলবই। যুগযুগ ধরে বিজেপি যা খুশি তাই করে যাচ্ছে, ডিটেনশন ক্যাম্পে লোকে আত্মহত্যা করছে, প্রতিরোধ হবেই এখন। আমি রাজনৈতিক গানই গাই। অনুষ্ঠানে বিজেপির লোক নিশ্চয়ই ছিল, তার বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়েরই অনেক মানুষ তেড়ে এসেছেন। এ ঘটনা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। ২০০৩/০৪ সালে হিন্দুরা আমাকে এর আগে বলেছে 'এর পরেরবার লুঙ্গি পরে আসিস'। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে হিন্দুরা। ধর্মস্থানকে যদি রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, আমিও আমার সংগীতের অনুষ্ঠানকে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রচারমঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে বেশ করেছি, আবার করব।"