খবরের কাগজে পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপনে তাঁর ছবি বেরনোর পর রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছেন বউবাজারের বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী প্রসাদ। কিন্তু খ্যাতির বিড়ম্বনা যে কী জিনিস তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বিজ্ঞাপনের সেই মহিলা। তিনি নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের অধীনে বাড়ি পেয়েছেন। একটি নবনির্মিত বাড়ির সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তার ছবির নেপথ্য রহস্য চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। কোনও বাড়িই পাননি তিনি। অথচ পড়শি থেকে শুরু করে পরিজনরা তাঁকে নিয়ে মশগুল। ব্যাপারটা কী?
বউবাজারের ৭১ নম্বর মলঙ্গা লেনের বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর পরিবার এখন মহা বিড়ম্বনায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বিজ্ঞাপনে তাঁর সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। পাঁচশো টাকা ভাড়ায় ছয় বাই আট ফুটের একটি ঘরে থাকেন লক্ষ্মীদেবী। আট সদস্য পরিবারে। কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন কলকাতা শহরে। কিন্তু খবরের কাগজে বড় বড় করে তাঁর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপনে বেজায় চটেছেন তিনি।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীদেবীর ছেলে রাহুল প্রসাদকে তাঁর এক বন্ধু জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মায়ের ছবি কাগজে বেরিয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি রাহুলের। পরে খবরের কাগজ দেখে হতবাক তিনি। ২৫ ফেব্রুয়ারি আবার সেই ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন বেরোয় খবরের কাগজে। শহরে বড় বড় হোর্ডিংয়েও সেই ছবি। প্রতিবেশীরাও বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁরাও লক্ষ্মীদেবীকে বলতে থাকেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেলে, কিন্তু আমাদের জানালে না!’’
পড়শিদের বোঝালেও তাঁরা বিজ্ঞাপন ভুয়ো মানতে নারাদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি থাকায় সে বিজ্ঞাপন ভুয়ো হয় কী করে! প্রশ্ন তোলেন প্রতিবেশীরা। পরে তাঁরা জানতে পারেন প্রকৃত সত্য। ২০০৯ সালে স্বামী চন্দ্রদেব প্রসাদ মারা যাওয়ার পর পরিবারের ভার তাঁর কাঁধে আসে। তিন ছেলের মধ্যে দুজন ভ্যান রিকশা চালান। একজন বেকার। সরকারি বাসের কর্মী ছিলেন স্বামী, তাই মৃত্যুর পর মাত্র ২ হাজার টাকার পেনশন পান। অভাবের সংসার চালাতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে হয় তাঁকে।
তিনি জানিয়েছেন, এবছর গঙ্গাসাগর মেলার সময় বাবুঘাটে ঠিকা শ্রমিকের কাজ পান তিনি। সেখানে কয়েকজন এসে তাঁর ছবি তোলেন। এখন তিনি বিজ্ঞাপনে দেখছেন, কাগজে তাঁর সেই ছবি এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। বাস্তবে ঘর তো পানই-নি, উল্টে পাড়ায় বদনাম হল তাঁদের।
লক্ষ্মীদেবী আরও জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপন নিয়ে শোরগোল পড়তেই কয়েকজন বিজেপি নেতা এসেছিলেন বাড়িতে। প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন অনেক। বলা হয়েছে, ভোট মিটলেই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে। কিন্তু জীবনে যা অভিজ্ঞতা হল, আর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে চান না তিনি। বরং এখন তিনি চাইছেন, যে ঘরের জন্য বদনাম হতে হল, সেটাই এখন সরকারের কাছে চাই।