আম্ফানের পর গাছেদের 'পুনর্জন্ম', ডালে এল নতুন পাতা

ঝড়ের আগের চেহারা তিলোত্তমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না কেউ। তবে চেনা সাজ যতোটা ফেরানো যায়, সেই চেস্টায় উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই কলকাতাবাসী এবং তাঁদের সহযোগীরা।

ঝড়ের আগের চেহারা তিলোত্তমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না কেউ। তবে চেনা সাজ যতোটা ফেরানো যায়, সেই চেস্টায় উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই কলকাতাবাসী এবং তাঁদের সহযোগীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

'রি-প্ল্যান্ট' করা গাছের ডালে এল নতুন পাতা

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে মারণ রোগের তালিকা ছোট হচ্ছে ক্রমশ। আগে যেসব রোগ ব্যাধি হলেই প্রায় নিশ্চিত ছিল মৃত্যু, এখন সেসব নিয়ে তেমন গা করেন না রোগী চিকিৎসক কেউই। আমাদের চিকিৎসা তো হচ্ছে। কিন্তু গাছেদের? হ্যাঁ তাও কিন্তু হচ্ছে। এ শহরেই নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছে কত কত গাছ। আম্ফান পরবর্তী কলকাতার চেহারাটা রাতারাতি কেমন বদলে গেছে। আবেগে জড়ানো কলকাতায় এই একুশ শতকেও গাছ দিয়ে মানুষ রাস্তার মোড় চেনে, ছায়া দেখে সময়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ঝড় এসে কেমন পালটে দিল সব হিসেব। ঝড়ের আগের চেহারা তিলোত্তমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না কেউ। তবে চেনা সাজ যতোটা ফেরানো যায়, সেই চেস্টায় উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই কলকাতাবাসী এবং তাঁদের সহযোগীরা। এই দুজন হলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী মুদর পাথেরিয়া, যাঁর সরোবরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের নিবিড় যোগাযোগ, এবং অর্জন বসু রায়, যিনি ‘নেচারমেটস’ নামক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার সদস্য তথা পরিবেশকর্মী।

Advertisment

রবীন্দ্র সরোবর অঞ্চলে যে বিপুল সংখ্যক গাছ ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল, তাদের কয়েকটিকে 'রি-প্ল্যান্ট' করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওই দুই সমাজকর্মী। তিন সপ্তাহের মধ্যে রবীন্দ্র সরোবর অঞ্চলের ১০৭ টি গাছকে ফের নতুন জীবন দেওয়া গিয়েছে। এখনও চলছে কাজ। এঁদের মধ্যে বেশ কিছু গাছের ডালে ইতিমধ্যে ধরেছে কচি সবুজ পাতা। আর আজ থেকে একই কাজ শুরু হচ্ছে সুভাষ সরোবরে, সেখানে ৪০টি গাছকে দেওয়া হবে নতুন জন্ম। পদ্ধতিটি নিঃসন্দেহে খরচাসাপেক্ষ। তাই যত গাছ উপড়েছে শহরের বুক থেকে, সব ফেরানো প্রায় অসম্ভব, কিন্তু যতটা সম্ভব শহরকে তার নিজের রূপটুকু ফিরিয়ে দিতে চাইছেন এঁরা।

publive-image

Advertisment

রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন রাস্তা, আমফানের পরদিন

রবীন্দ্র সরোবরকে বেছে নেওয়ার পেছনে মূলত আবেগজনিত কারণ ছিল সবচেয়ে বেশি, জানালেন মুদর পাথেরিয়া। "আমি এই অঞ্চলের সঙ্গে ২০ বছর ধরে জড়িয়ে। রবীন্দ্র সরোবরকে এভাবে দেখে আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি। এটা তো আমার নিজের বাগানের মতো, সন্তানের মতো। এক একটা গাছের বয়স ৭০, ৮০। আমাদের বাবা মায়েদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক একটা গাছ। তাই এই অঞ্চলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ব্যক্তিগত। কিন্তু একটা গোটা শহরের জন্য শুধু আমরা ক'জন কাজ করতে পারব না। সরকার একাও পারবে না। প্রত্যেক এলাকার মানুষ যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে এই কাজ অসম্ভব"।

publive-image

ঠিক কতটা অর্থসাহায্য প্রয়োজন? সেই হিসেব আগেই জানিয়েছিলেন মুদর। "হাইড্রা ক্রেন-এর ভাড়া দৈনিক ৭,৮০০ টাকা, সঙ্গে মজুরি জন পিছু ৫৫০ টাকা, এবং প্রয়োজন দিনে অন্তত দশজন মজুর। প্রায় ১২ হাজার টাকায় যদি অন্তত দিনে সাত থেকে আটটি গাছের পুনর্বাসন না করা যায়, তবে খরচ বৃথা যাবে"। ছক কষে কাজে নামতে তাই সরোবরের গাছগুলির গণনা করেছেন অর্জন। যার ভিত্তিতে গাছ ভাগ করা হয়েছে এ, বি, এবং সি ক্যাটেগরিতে। আপাতত সি ক্যাটেগরির গাছগুলিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁরা।

সবাই যদি নিজের আশপাশটুকু ভালোবেসে একটু যত্ন নেয়, একটু উদ্যোগী হয়, তাহলেও অনেকটা বদল আনা যায় বলে মনে করেন মুদর, অর্জনরা। যে শহর এতকিছু দিয়েছে, তাকে এতটুকু ফিরিয়ে দিতে পারি না আমরা?